রোজ নতুন নতুন খবর পাচ্ছি, কোন
‘গাছ’ টিচারের কথা না শুনে ঘরময় দৌড়াদৌড়ি করে বকুনি খেয়েছে, কে ‘গরু’ সাজার আনন্দে
রোজ বন্ধুদের গুঁতিয়ে দিচ্ছে, কোন ‘মুরগি ছানা’ সারাক্ষণ ডানা
নেড়ে ঘুরছে, এমনকি রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতেও – এইসব।
অবশেষে সে দিনটা এল। তিতির হয়েছে ‘পিঙ্ক
ফ্লাওয়ার’। কস্টিউমটা চমৎকার দেখতে, ভেলভেটের সবুজ আগাপাশতলা, মুখের চারদিকে ফুলের
পাপড়ি আর বুকের কাছে দুটো চিকন পাতা সহ ইয়াব্বড় একটা ডাঁটি ঝুলছে। দেখে তো আমারই লোভ হচ্ছিল
ঢুকে পড়তে।
কিন্তু গায় চাপানো মাত্তর চিত্তির।
তিতিরের নাকি কুটকুট করছে ভেলভেট। অগত্যা ফুলহাতা জামা ফুলপ্যান্ট পরিয়ে তবে পরানো
গেল। এসব খোলা পরানো করতে গিয়ে আরেক সর্বনাশ হল, বৃক্ষটি পর্ণমোচী হয়ে গেল, মানে একটা পাতা খুলে হাতে চলে এল। এক্ষেত্রে ‘অর্ধং ত্যাজতি’ চলে না – ‘ওরে সেলাইয়ের বাক্স আন,
ছুঁচ সুতো খোঁজ, সেলাই কর’ দশা তখন।
সব করে তো মেয়ের – থুড়ি, ‘পিঙ্ক
ফ্লাওয়ার’এর হাত ধরে পৌঁছলুম ঠিক সময়। তারপর যথাসময় ম্যাকডোনাল্ডের সংসার এসে
হাজির হল স্টেজে। তারপর -
ম্যাকডোনাল্ড স্টেজে ওঠামাত্র আবার
নেমে পড়ল – তার দাড়ি আলগা হয়ে গেছে। জম্পেশ
করে দাড়ি সেঁটে আবার তাকে কোলে করে স্টেজে তুলে দেওয়া হল।
সেই অত্যুৎসাহী গরুটিরই বোধহয়,
স্টেজে উঠে আবার গুঁতোনো পেয়েছিল। কিন্তু টিচার সামনে বসে চোখ পাকাচ্ছে দেখে সে
শেষ অবধি সুবোধ গরুসুলভ আচরণই করেছে।
ঠিক সামনের ‘ফ্লাওয়ার’টির হয় হেঁচকি
উঠছিল, নয় যে জন্তুই পিছনে দাঁড়াচ্ছে সেই পা দিয়ে খোঁচা মারছিল – সমানে চমকে চমকে
উঠছিল বেচারা।
তবে তিতির কিন্তু অসম্ভব ভাল ‘ফ্লাওয়ার’। পুরো সময় সে প্রবল
বেগে হাওয়ায় নড়ল, মানে ঢকঢক করে মুন্ডু নাড়ল। তার মাথা নাড়ানোর চোটে ঐ পাতাশুদ্ধু
ডাঁটি এইসা পেন্ডুলামের মত দোল খেল যে পাশের ‘ফ্লাওয়ার’টির গায় অন্তত দুবার লাগল গিয়ে।
তার ফলে, ছেলেটি নিজে দোলার কথা ভুলে গিয়ে বাকি সময়টা ত্রস্তচোখে তিতিরের দিকে
তাকিয়ে বসে রইল।
মোটের ওপর খাসা হল নাচগান।
বাড়ি ফিরলুম তিতিরের স্বরচিত ভার্সান শুনতে শুনতে –
‘ওল্ড ম্যাকডোনাল্ড হ্যাড আ ফামইয়া ইয়া ও
ইন হিজ ফাম হি হ্যাড সাম তিতির
ইয়া ইয়া ও
তিতির প্লে প্লে হিয়ার আন্ড প্লে প্লে দেয়ার
হিয়ার আ প্লে দেয়ার আ প্লে এভ্রিয়ার প্লে প্লে
ইয়া ইয়া ও।’
এভ্রিয়ার প্লে প্লে – আমরা বড়রাই
খালি এসব সহজ কথা ভুলে যাই বটে।