আর পাঁচটা
বাচ্চার মত তিতিরেরও নানাবিধ কৌতূহল চাগাড় দিচ্ছে ক্রমশঃ। ইদানিং তার গবেষণার বিষয়
হল ‘মরে যাওয়া’।
মানে, রামায়ণ
দেখতে গিয়ে রাশি রাশি ‘বাঁদোর’ আর ‘রাক্কোশ’এর মরে যাওয়া দেখা হয়েছে তো! ব্যাপারটা
নিজের মত একরকম করে মানেও বুঝে নিয়েছে। এবার তার প্রয়োগ চলছে। যত্রতত্র, যখন তখন।
রাতে শুয়ে
আমায় গল্প শোনানোটা এখন হরদম হয়। আজকাল, প্রায়ই একদল অসীম পরিশ্রমী ‘রাক্কোশ’এর গল্প
শুনি, যারা দল বেঁধে আমাদের বসার ঘরে সোফার পিছনে বসে খুব ‘কাজকম্মো’ করে। তারা “খায়
না, দায় না, খালি খালি খেলনা বানায় আর সব্বাইকে খেলতে দেয়।” তাদের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য
হল, তিতিরের ভাষাতে, “যেই না রাত্তির সাড়ে নটা বাজে, অমনি তারা সব্বাই হাই তুলে মরে
যায়। আবার পরদিন সকালে উঠে কাজকম্মো করতে লেগে পড়ে।”
এখনো ভেবে
পাইনি এই অদ্ভুত মজার ধারণাটা পালটাব, না এমনিই রেখে দেব আপাতত। এরই মধ্যে মেয়ের আজ
নতুন কীর্তি।
আজ গলা
খুশখুশ কাশি নিয়ে তিতির ‘ডাক্তাবাবু’ গেছিল দাদুর সঙ্গে।সেখানে এমনিতে বেশ সভ্যভব্য
হয়েই বসে ছিল, হুঁ হুঁ করে গান গাইছিল দাদুর পাশে বসে।
কিন্তু,
আজ খুব ভীড় ছিল ডাক্তারখানায়। সবাইকেই বেশ অনেক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। এক বয়স্কা
মহিলা, অপেক্ষা করতে করতে, চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মানে ঢুলুনি নয়, বেশ নিথর
ঘুম, চোখ বন্ধ, মাথা একদিকে কাত টাইপের ঘুম।
তিতির চেয়ার
থেকে উঠে গুটিগুটি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে। তারপর মুন্ডু ঘুরিয়ে,
চোখ বড় করে, সজোরে দাদুকে বলেছে, “এই রে!! মরে গেছে মনে হয়!”
আশপাশের
সব লোক হো-হো করে হেসে উঠেছে, ভদ্রমহিলা চমকে জেগে গেছেন, আর তিতির লজ্জা পেয়ে এক ছুটে
দাদুর কোলে। কি ভাগ্যিস তক্ষুণি ভিতরে ডাক পড়েছিল!
পুনশ্চ
: আরেকটু ফাউ গল্প। ডাক্তারবাবু আজ তিতিরকে দেখে ‘গুড গার্ল’ বলেছেন। বাড়ি আসার পথে
‘ওস্তাদের মার শেষরাত্রে’ মার্কা একটা হাসি দিয়ে তিতিরের মন্তব্য, “ডাক্তাবাবু তো
আর আমাদের বাড়ি আসেনি, তাই গুড গার্ল বলেছে, বাড়িতে এলে টের পেত আমি কত দুষ্টু করতে
পারি!”
(২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬)