Saturday, 19 March 2016

কৌতূহল


আর পাঁচটা বাচ্চার মত তিতিরেরও নানাবিধ কৌতূহল চাগাড় দিচ্ছে ক্রমশঃ। ইদানিং তার গবেষণার বিষয় হল ‘মরে যাওয়া’।

মানে, রামায়ণ দেখতে গিয়ে রাশি রাশি ‘বাঁদোর’ আর ‘রাক্কোশ’এর মরে যাওয়া দেখা হয়েছে তো! ব্যাপারটা নিজের মত একরকম করে মানেও বুঝে নিয়েছে। এবার তার প্রয়োগ চলছে। যত্রতত্র, যখন তখন।

রাতে শুয়ে আমায় গল্প শোনানোটা এখন হরদম হয়। আজকাল, প্রায়ই একদল অসীম পরিশ্রমী ‘রাক্কোশ’এর গল্প শুনি, যারা দল বেঁধে আমাদের বসার ঘরে সোফার পিছনে বসে খুব ‘কাজকম্মো’ করে। তারা “খায় না, দায় না, খালি খালি খেলনা বানায় আর সব্বাইকে খেলতে দেয়।” তাদের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল, তিতিরের ভাষাতে, “যেই না রাত্তির সাড়ে নটা বাজে, অমনি তারা সব্বাই হাই তুলে মরে যায়। আবার পরদিন সকালে উঠে কাজকম্মো করতে লেগে পড়ে।”

এখনো ভেবে পাইনি এই অদ্ভুত মজার ধারণাটা পালটাব, না এমনিই রেখে দেব আপাতত। এরই মধ্যে মেয়ের আজ নতুন কীর্তি।

আজ গলা খুশখুশ কাশি নিয়ে তিতির ‘ডাক্তাবাবু’ গেছিল দাদুর সঙ্গে।সেখানে এমনিতে বেশ সভ্যভব্য হয়েই বসে ছিল, হুঁ হুঁ করে গান গাইছিল দাদুর পাশে বসে।

কিন্তু, আজ খুব ভীড় ছিল ডাক্তারখানায়। সবাইকেই বেশ অনেক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। এক বয়স্কা মহিলা, অপেক্ষা করতে করতে, চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মানে ঢুলুনি নয়, বেশ নিথর ঘুম, চোখ বন্ধ, মাথা একদিকে কাত টাইপের ঘুম।

তিতির চেয়ার থেকে উঠে গুটিগুটি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে। তারপর মুন্ডু ঘুরিয়ে, চোখ বড় করে, সজোরে দাদুকে বলেছে, “এই রে!! মরে গেছে মনে হয়!”

আশপাশের সব লোক হো-হো করে হেসে উঠেছে, ভদ্রমহিলা চমকে জেগে গেছেন, আর তিতির লজ্জা পেয়ে এক ছুটে দাদুর কোলে। কি ভাগ্যিস তক্ষুণি ভিতরে ডাক পড়েছিল!

পুনশ্চ : আরেকটু ফাউ গল্প। ডাক্তারবাবু আজ তিতিরকে দেখে ‘গুড গার্ল’ বলেছেন। বাড়ি আসার পথে ‘ওস্তাদের মার শেষরাত্রে’ মার্কা একটা হাসি দিয়ে তিতিরের মন্তব্য, “ডাক্তাবাবু তো আর আমাদের বাড়ি আসেনি, তাই গুড গার্ল বলেছে, বাড়িতে এলে টের পেত আমি কত দুষ্টু করতে পারি!”

 
(২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬)

Saturday, 5 March 2016

ম্যাজিক পট



            আপিশ থেকে আসতেই তিতির হাঁউমাউ করে ছুটে এল। “মা, মা, সব্বোনাশ হয়েচে!”

    একটু আগেই নিচে দেখে এসেছি তার বল পেটানোর সঙ্গীরা জটলা করছে, কার নাকি দৌড়তে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাঁটু ছড়ে গেছে তাই নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লুম, মেয়ের কি সব্বোনাশ হল তা ভেবে।

    “কি হয়েছে রে?”

    “আজ তো বেশ্‌পতিবার? কিন্তু আজ আমার ম্যাজিক পট আসেনি! কি সব্বোনাশ বল তো?”

    এ হে হে! তাই তো! প্রতি বুধবার সন্ধেবেলা ম্যাজিক পট নিয়ে ফিরি। দাদু লুকিয়ে রাখে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাত খাবার সময় ওটি পায়। কাল তালেগোলে ভুলে গেছি। এমনকি আজও ভুলে গেছি।

    “তাই তো? ভারি অন্যায়! চ গিয়ে নিয়ে আসি।”

    মা যে এটাও পারে, সেটা জেনে স্বর্গীয় হাসিতে পুঁচকে মুখটা ভরে উঠল। যাচিয়ে নিল, “আমিও যাব তো তোমার সঙ্গে?”

    “হ্যাঁ রে! দাঁড়া জিনিসপত্রগুলো রেখে আসি।”

    ------

    মার হাত ধরে ঝুলতে ঝুলতে দোকানপাড়ায় আসা হয়েছে। মার কফি, বিস্কুট কেনা হয়েছে, মেয়ের গাছের চারদিকে বোঁ বোঁ করে পাক খাওয়া, হবি সেন্টারে মাছেদের খবরদারি করা, হয়েছে। এবার তার লাড্ডু খাবার শখ হয়েছে, কেনা হয়েছে, রকে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে ভোজন চলছে। তার বকর বকরে তাল দিতে দিতেই চুপিসারে ‘ম্যাজিক পট’টা আনিয়ে নিই চেনা দোকানদারকে দিয়ে।

    লাড্ডু শেষ করে, কাগজটা ডাস্টবিনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতেই তিতিরকে বলি, “দ্যাখ তো হাতে কি আমার?”

    চোখ কৌতূহলে চকচক, তারপরই পরম উল্লাসের হাসি। খালি আমায় জড়িয়ে ধরছে আর বলছে “নত্তুন ম্যাজিক পট! ম্যাজিক করে এসে গেছে!”

    ওখানে বেলুনওলাও ছিল। রাশি রাশি খেলনার দোকানও। তিতিরকে দেখিয়েওছিলুম সেসব। বিনা বাক্যব্যয়ে ঘাড় নেড়ে বইটা বুকে সাপটে ধরে অটোর লাইনের দিকে চলল মেয়ে, বাড়ি ফিরেই দাদুর কাছে ‘পড়তে’ বসতে হবে!



(২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬)