Sunday, 29 April 2018

মিষ্টি

 
মা?”
বলো
আমার একটু শোওয়া পাচ্ছে, পাশে এসে শোও তো
এটা অতি উত্তম প্রস্তাব বলতে কী , অনেকক্ষণ টানা কাজ করেছি ল্যাপটপে, ঘাড় টনটনাচ্ছে আমারও খানিকক্ষণ ধরে একটু শোওয়া পাচ্ছিল বইকি!
খানিকটা কিলবিল করার পর দুজনে বেশ খাপে খাপে ফিট করে গেলুম কচি পা কোমরে, কচি হাত গলায়
নাকে নাকে যুদ্ধ করতে করতে মনে পড়ল, “এই তিতির! তোর কাল যে একটা নতুন নাম হয়েছে, বলেছিস দিম্মাকে?
“কী নাম, মাম্মা?
“কাল যে আন্টির বাড়ি গেলুম আমরা? সেখানের ঠাম্মা কী বলে ডাকছিল, মনে নেই?
মনে পড়তেই একগাল হাসি ফুটে ওঠে মেয়ের মুখে আহা, বড় আনন্দ করে এসেছে তো!
“অ দিম্মা! আমার নতুন নাম হয়েছে জানো?
“কী রে?
“পিংখাড়ু!”
হালকা পাতলা মেয়ে আমার ঠিক আমার নিজের ছোটবেলার মত এদিকে এনার্জির বাণ্ডিল, সারাক্ষণ লাফাচ্ছে ডাক্তারেরা চিরকাল একবাক্যে চমৎকার ফিট আর হেলদি সার্টিফিকেট দিয়ে এসেছে কিন্তু দেখতে টিংটিঙে তো বটেই
ভারী মজা পান মহিলা তিতিরের কাণ্ডকারখানা দেখলে সেই স্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঐ নতুন নামে
এদিকে তিতির মানে বোঝেনি আমায় জিজ্ঞেস করল, এটা কি পিংক সংক্রান্ত কিছু?
বললুম, “না রে, তুই খুব মিষ্টি তো, তাই একটা মিষ্টি পুরোনো বাংলা শব্দ ব্যবহার করে তোর নাম দিয়েছে ঠাম্মা
উত্তরটা শুনে সটাং উঠে বসতে বাধ্য হলুম
“আমায় এত মিষ্টি বানিও না তো, পিঁপড়ে লেগে যাবে!
সিরিয়াসলি বলেছে! একেক সময়ে হাসি চেপে রাখা যে কী কঠিন!
একটু ঠাট্টা করতে ইচ্ছে করে
“যা! আর আমি যে এত মিষ্টি! আমায় তো পিঁপড়েরা খেয়েই ফেলবে! কী হবে?
“তুমি মিষ্টি নও
হ্যাঁ রে, এরকম করে মুখের ওপর বলতে হয়! তোর কি প্রাণে মায়া দয়াও নেই র‍্যা!
আমার ম্লান মুখ দেখে তার একটু দুক্ষু হয় বোধহয় তড়িঘড়ি ব্যাখ্যা দেয়,
“তুমি মিষ্টি নও তো! তুমি হচ্ছএঁটেস্টি...এঁ...আলুর চপ!
ঈইক্‌!!!!!
“হুঁ তুমি বড়সড় আলুর চপ, আমি পুঁচকে
জীবন আমায় যে রেটে ভাজা ভাজা করছে, তাতে চপ হতেই পারি কিন্তু এসব বললে খিদে খিদে পেয়ে যায় যে আবার!
রান্নাঘরের যথোচিত সন্ধানকার্য চালিয়ে, তিতিরের দিম্মার স্টক কিঞ্চিৎ সাবড়ে দিয়ে এসে নিজের কাজে বসেছি টেবিলে, তিনি আবার এসে হাজির
“মাম্মা আমি এখন কী করব?
“পড়া হয়েছে সকালে?
“হুঁউউউউ! একটা নতুন বইয়ের দু পাতা বুঝলে, টু পেজেস নিজে নিজে রিডীং পড়েছি
“নিজে নিজে, আচ্ছা? আমি যে শুনলুম দিম্মা বলে বলে দিচ্ছে?
“আহহহ, বড় বড় নতুন সব ওয়ার্ড ছিল তো! গলত হচ্ছিল
“তিতির! আবার অমন করছ! গলত হচ্ছিল না, ভুল হচ্ছিল বাংলা বললে পুরো বাংলা বলবে, হিন্দি বললে শুদ্ধ হিন্দি
“হুঁ, ইয়ে, ভুল হো রহা থা
অসম্ভব বিচ্ছু হাসি হাসতে পারে পাজিটা! তবে পেটে কাতুকুতু দিলে সব পেজোমি জব্দ হয়ে যায়
“ইংলিশ পড়েছিস তো? আয় তাহলে আমার পাশে চেয়ার টেনে বোস, অঙ্ক করাই
অমনি দুচোখ কেমন স্বপ্নাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে, অদৃশ্য একটা ডানা পিঠে গজাচ্ছে দেখতে পাই পষ্ট, আর বহুদূরের মন কেমনের গলায় ভেসে আসে,
“মাম্মা, বলছি কি, তুমি তো কাজ করছ, আমি পাশে বসলে তোমার ডিস্টাব্‌ হবে , আমি বরং একটু ফ্রী টাইম নিই এখন
বলেই, দুটো ভারী উদবিগ্ন চোখ আমার দিকে তাকায়আমার মুখে লুকোতে না পারা হাসির চিলতে বেরিয়ে পড়েছে দেখামাত্রইয়ে এ এ এ একরে ডানা মেলে তিতিরপরী উড়ে যায় তার খেলনার সাম্রাজ্যে
দরজার কাছ থেকে বাণী দিয়ে যায়“আমি তো ছোট বাচ্চা! বাচ্চাদের একটু খেলতেও তো দিতে হয়, বলো!
সে চলে যাবার পর আরেকটু কাজ করছিলুম মনের মধ্যে গুজগুজ করতে লাগল তার বাণী শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে গুটি গুটি গিয়ে বসেই পড়লুম হাঁটু মুড়ে বুঝলেন, পেঙ্গুইন আর হিপ্পো বাজার করতে যাচ্ছে তখন এদিকে, ওদিকে পুলিশ আঙ্কলদের বাড়ি আধখানা তৈরি হয়ে পড়ে আছে, তিতির তার মধ্যে উবু হয়ে বসে একটা লাট্টুর গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে ব্যস্ত
কটা ব্লক খুঁজেপেতে জোগাড় করে আধখ্যাঁচড়া বাড়িটা শেষ করতে লেগে গেলুম
নাহয় মিষ্টি নই, তাই বলে কি বাচ্চাও নই একেবারে? আমাকেও তো একটু খেলতে দিতে হয় তাহলে, বলো!