Monday, 21 October 2019

ভাতঘুম


ভদ্রমহিলা মনের আনন্দে ঘুমোচ্ছিলেন।



না ঘুমোনোর কোনো কারণ নেইও। ভোট উপলক্ষ্যে একটা মুফতে ছুটি পাওয়া গেছে, বাজার যেতে হয়নি, বারোটা নাগাদ হেলেদুলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে চমৎকৃত হয়ে দেখেছেন তাঁর জন্যই সবাই অপেক্ষায়, মানে একদম ফাঁকা আর কী, তারপর আঙুলে ‘পোলিওর দাগ’ নিয়ে চাট্টি লেবু-শসা কিনে ফিরে এসেছেন রেকর্ড সময়ে, চান করে চিংড়ির মাথা দিয়ে চচ্চড়ি, মটর ডাল, ট্যাংরার ঝাল ইত্যাদি সহযোগে ভাত খেয়েদেয়ে বালিশ আঁকড়ে ভাতঘুম দিচ্ছেন, মনে আনন্দ থাকবে না তো কি অমর আকবর অ্যান্টনি থাকবে?



ঘুমটা একটা মোলায়েম, মাজা, মাখন মাখন ব্যাপার হয়ে এসেছে, স্বপ্ন দেখছেন এক বিয়েবাড়ি গেছেন, তারা বিরিয়ানির নেমন্তন্ন করেছে, কিন্তু খেতে আর দিচ্ছে না বলে আমন্ত্রিতরা ঘোঁট পাকাচ্ছে, অথচ ভদ্রমহিলা নাকে টের পাচ্ছেন রান্না হয়ে গেছে, আমন্ত্রণকারীরা কেউ সেখানে নেই যে জিজ্ঞাসা করবেন, তাই সবাই মিলে সেই লুক্কায়িত বিরিয়ানির খোঁজে যাওয়া হবে বলে টর্চ দড়ি ইত্যাদি জড়ো করা হচ্ছে, এমন সময়ে,



“মা?!!”



চোখ খুলতে না খুলতে কোমরে খোঁচা।



“অ মা!! করি?”



ভদ্রমহিলা তার অব্যবহিত পূর্বে মন দিয়ে নিমন্ত্রণবাড়ির ম্যাপ দেখছিলেন। ভারি সন্দিগ্ধ গলায় বললেন, “করবি? কী করবি? কেনই বা করবি?”



তাঁর ক্ষীণ আশা ছিল মেয়ে হয়তো বলবে ‘অঙ্কের ওয়ার্কশীটটা’, বা ‘গান প্র্যাকটিস’। সে আশায়  জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি বললেন, “ডেকোরেশন?”



মা ততক্ষণে আবার আধোঘুমে বিরিয়ানির সন্ধানে উতলা হয়ে পড়েছেন, তিনি বললেন, “বিয়েবাড়িতে আবার কী ডেকোরেশন করবি, করাই তো আছে।“



কন্যা তুমুল চেঁচিয়ে জানায় সে বিয়েবাড়িতে কিছু করছে না। সে এই বাড়িতে করছে, এই ঘরে করছে, এবং মায়ের অফিসের ব্যাগে করছে।



ঘুমঘোরেও মায়ের কানে ‘অফিসের ব্যাগ’ শব্দবন্ধদুটি পৌঁছয়, এবং তৎক্ষণাৎ তিনি সটাং উঠে বসে “এই এই খবরদার আমার অফিসের ব্যাগে একদম হাত দিবি না, ইচ্ছে হলে আমার লাল ব্যাগটায় কর গে’” বলে চিক্কুর ছেড়ে আবার ধপাস করে শুয়ে পড়েন।



এবার কন্যা দেড়গজী কত কিছু বলে যায় সে আর তাঁর কানে যায় না।



“মা করি?”



“হুঁ। লাল ব্যাগে।“



অতঃপর তিনি আবার সেই রহস্যময় বিয়েবাড়ির লুক্কায়িত বিরিয়ানির সন্ধানে দলবল নিয়ে চলে যান। সেই ঘোর অ্যাডভেঞ্চারে কখনো তাঁর মুখের উপর বাদুড়ে পাখা বুলিয়ে যায়, কখনো পায়ের উপর স্পষ্ট টের পান সরীসৃপের ছোঁয়া।



আধঘন্টা পরের আপডেট –



ভদ্রমহিলা চোখ খুললেন। ঘুম যেন আঠার মত চোখে জড়িয়ে আছে। পা নাড়তেই কিসব খসখস করে উঠল। হাত তুলে চোখমুখ মুছতে গিয়ে মুখের চামড়া এক লেয়ার উঠে এল যেন হাতে।



ভয় খেয়ে উঠে আয়নার মুখোমুখি বসার পর দেখলেন মুখমণ্ডলে পুরু করে কন্যার ক্রীমের প্রলেপ, তার উপর স্কেচপেনের আঁকিবুকি, যা কিনা তাঁর হাতের তাড়নায় ধেবড়ে গেছে।



সর্বশেষ আপডেট -



ভদ্রমহিলা খাটে বাবু হয়ে বসে, ভয়ানক সব মুখভঙ্গিমা সহযোগে নিজের পায়ের ডিম থেকে সোনালী, লাল, ব্রাউন, স্বচ্ছ নানা কিসিমের সেলোটেপ চড়াং চড়াং করে টেনে খুলছেন। এখনো জানেন না, অন্য ঘরে তাঁর বাজারের লাল ব্যাগ স্কেচপেনে রামধনু রঙ হয়ে, তাঁর ওষুধের বাক্স সারা গায়ে স্টিকার চড়িয়ে এবং এক নিরীহ ঘুমন্ত দাদুমণি মাথায় গোটা চারেক রঙ্গীন ব্যাণ্ড দিয়ে বাঁধা ঝুঁটি নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।