Wednesday, 17 February 2021

সরস্বতী পুজো

 


ছোট্ট
দুটো গল্প শোনাই।

 

কন্যা আজন্ম মুম্বইয়ের বাসিন্দা, কিন্তু তাঁর মা কুড়ি বছরেরও বেশি প্রবাসে কাটিয়ে ফেলেও নিজেকে "কলকাতার মেয়ে" বলেন। ফলে তিতির যেমন "আমচি মুম্বই" নিয়ে গর্বিত, তেমনই আনন্দিত নিজেকে "ব্যাঙ্গলি" বলতে। এবার, স্বাভাবিকভাবেই তাঁর স্কুলে শেখানো ভাষাগুলি হল ইংলিশ, হিন্দি মারাঠি। ফলে বাংলাশিক্ষা চর্চা বাড়িতে যেটুকু ভালোবেসে করা সম্ভব, সেটুকুই।

 

এরকম একদিন সন্ধ্যায়, আমি আপিশ করছি, পাশে সদ্য পছন্দ করে কেনা একটা গল্পের বই নিয়ে মেয়ে বসেছে পড়তে। নিজেই পড়ছে, মানে আটকালে বলে বলে দিচ্ছি। খানিক পর সেসব তুলে রেখে খেলছে, খেলতে খেলতে গল্প চলছে। বইতে পড়া অংশ নিয়েও কথা হচ্ছে।

 

"মা আরেকটা কী যেন টাইপ ছিল পায়রার?"

 

এটা ওটা বলি।

 

"না, না। বিদ্যুৎ! "

 

ট্যান খাই। জন্মে পায়রার টাইপ বিদ্যুৎ হতে শুনিনি। সেরকম শুনতে কোনো শব্দ? মনে হাতড়াই। পাই না।

 

"হ্যাঁ গো। বিদ্যুৎ...  কী একটা ছিল! পায়রা!"

 

অগত্যা বই খুলি দুজনে।

 

"এইত্তো! এটাই বলছিলুম!"

 

তারপর আমার দিকে চেয়ে লাজুক হেসে, "বিদ্যুৎ চমকালে বাজ পড়ে না?"

 

এবার থেকে "গেরোবাজ" পায়রা দেখলেই আমি বিদ্যুৎ বলে ডাকব।

 

---

 

অনেকদিন বিচ্ছিরিভাবে কাজের চাপে ফেঁসে আছি। কত কিছু করতে ইচ্ছে হয়, করতে পারি না। সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল থেকে মাইকে "কোথা আছো গুরুদেএএএএব" ভেসে আসতে শুনে খুব কাগজ কলমে ছবি আঁকতে ইচ্ছে হল। ছোটোবেলার নস্টালজিয়া আর কী!

 

কালো জেল পেন একটা আছে, কিন্তু আর কিছু নেই। তিতিরের কাছ থেকে ড্রয়িং খাতা, পেন্সিল ইরেজার ধার নিয়েই বসে পড়লুম অগত্যা।

 

হাত একেবারেই গেছে বুঝতে পারছি। তবু ঠাকরুণকে মনের মতো করতে পারলুম অনেকটাই। তাপ্পর একটা কফি ব্রেক নিলুম।

 

ছাতে হাওয়া খাচ্ছিলুম। তাঁর আগমন।

 

"ম্যাঁ? তুমি হাঁস আঁকতে ভুলে গেছো?"

 

অকপটে স্বীকার করি, হাঁসটা আমি ঠিক পারছি না বলে বাদ দেব ভাবছি।

 

"আমি এঁকে দেব?"

 

এক সেকেন্ড লাগে আমার দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে।

 

"দে না! খুব ভালো হবে।"

 

যেতে গিয়েও দেখি ইতস্তত করছে। "বলছি... থাক। যদি ভালো না হয়...?"

 

" আবার কেমন কথা, তিতির? যেমন ইচ্ছে করছে আঁক, মন দিয়ে কর, অফ কোর্স ভালো হবে।"

 

"যদি ছবিটা খারাপ হয়ে যায়? তুমি অত সুন্দর করে এঁকেছো..."

 

"গেলে যাবে। আবার এঁকে দেব। যা, কর। নিজের নাম সই করে দিবি, আমি যেমন করি দেখেছিস তো?"

 

ঘাড় কাত করে একদৌড়ে চলে গেল।

 

আরও খানিক পরে, ঘরে এসে দেখলুম আমার  সরস্বতী ঠাকরুণের পাশে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাঁসের ছানা ডানা ঝাপটাচ্ছে।

 

এই না হলে আমার বিএফএফ!

 

এই- আমাদের সরস্বতী পুজো, বুঝলেন। বইতে, ছবিতে, গল্পে। একদিন নয়, প্রতিদিন, বছরভর।

6 comments:

  1. ছবিটা দেখতে ইচ্ছে করছে। সুন্দর লেখা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই লেখার উপরেই ছবি আছে তো! :)

      Delete
  2. তপন সেনগুপ্ত17 February 2021 at 03:41

    'টুক'! আমিও 'টুক' করে পড়ে গেলাম। কয়েক বছর পর এলাম তিতিরের গল্প পড়তে। এসে দেখি দিস্তা দিস্তা গল্প জমেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সবকটা পড়ে ফেলুয়ন ধীরেসুস্থে। :)

      Delete
  3. আহা! কমলা-রঙা রোদ্দুরের মতো গল্প।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু! :)

      Delete