Sunday, 15 May 2016

নতুন ক্লাস



দেখতে দেখতে তিতিরেরও এক বছর স্কুল হয়ে গেল। প্রি-প্রেপ থেকে প্রেপ-এ উঠে গেলেন কন্যা। আর কি বদল হল না হল পরে টের পাব, আপাতত যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা হল সক্কাল সক্কাল স্কুল, আর এবার থেকে শনিবারেও স্কুল।

    (কাজেই, শনিবার আমারও একটু ভোরবেলার আয়েশ করা বন্ধ এবার থেকে। সেদিন যেহেতু আমি বাড়িতে থাকব তিতিরের হুকুম “মা ইস্কুলে দিয়েও আসবে নিয়েও আসবে আর একদম দুত্তুমি করবে না।” শেষ পার্টটার কোন মাথামুন্ডু নেই, তার মা জীবনে কখনোই দুষ্টুমি জিনিসটা ঠিক করে উঠতে পারেনি – কিন্তু তিতিরের দাবি ওটা নাকি ‘বলতেই হয়!’)

    যাক সে তো পরের কথা। অদ্য ছিল প্রথম শনিবার। বাড়িতে এখন তিতিরের দিম্মা হাজির, তাই কিঞ্চিৎ ফাঁকি দেবার চেষ্টা করেছিলুম। মানে ভোররাত্রে উঠে পাশের ঘরে গিয়ে শুয়েছিলুম। কিন্তু তিতিরকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নাকি! গাঢ় গভীর ঘুমের মধ্যে ‘আঁক্‌’ করে উঠে পড়তে হল – পিঠে একতাল আলুর বস্তার মত ভারি কিছু এসে পড়েছে আর কানের ঠিক ফুটোর সামনে তারসপ্তকে “ম্যাাা” চীৎকার। সেই সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডে তিতিরের দিম্মা আর আন্টির হাঁকডাক।

    ঘুম তো গেল, কিন্তু উঠে বসব কি! তিতির পিঠে ঘোড়সওয়ার হয়ে গেছে। তার দাবি সে ঐভাবে বসেই দাঁত ব্রাশ করবে। যদি বা দিম্মা ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেল, বারান্দায় গিয়েই আবার চীলচিৎকার শুরু “দেখবে এসো মা দেখবে এসো, লাল লাল সুয্যিমামা! একদম রেড!”

    ঠিক, এদ্দিন তো এতটা ভোরে উঠত না, টুকটুকে লাল সূর্য আগে দেখেনি বোধহয়।

    তা মেয়ে লক্ষ্মী বলতে হবে। ঠিক সময় মত দুধ বিস্কুট খেয়ে সেজেগুজে রেডি হয়ে গেল। মায়ের তখনো চা গরম বলে ফুঁ দিয়ে গলঃধকরণ করার চেষ্টা চলছে – পায় হাওয়াই চটি (না না নীল স্ট্র্যাপ নয়), মাথার চুল চুড়ো করে আটকানো এখনো আঁচড়ানো হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিতির বেশ নিশ্চিন্তে খেলার শিশি বোতল এনে টিভিটাকে মিছিমিছি তেল মাখাতে লেগে গেল – মার তো এখনো ঢের দেরি!

    আমি অবশ্য পাঁচ মিনিটে রেডি। রাস্তায় হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে আর প্রতি তিন চার পা বাদে বাদে হাত পালটাতে পালটাতে চললুম – এটাই নাকি আজকে হাঁটার নিয়মগলির মোড়টায় এসে তিতিরের প্রশ্ন, “মা! আমার কি আজ ইস্কুল?”

    “হ্যাঁ মা।”

    “তোমার কি আজ অপিশ?” বেশ একটু উদ্বিগ্ন গলা।

    “না রে, আজ তো শনিবার। আজ আমার অফিস ছুটি। তোকে স্কুল থেকে নিতে আসব দেখিস।”

    “আজ তাহলে আমার ইস্কুল আর তোমার ছুটি?”

    “ঠিক!”

    কয়েক পা চুপচাপ। গবেষণা চলছে কিছু একটা। তারপর সিদ্ধান্ত প্রকাশ, “অপিশ না গিয়ে তুমিও যদি আমার সাথে ইস্কুল যেতে, ভালোই হত! বেশ তুমি আর আমি পাশাপাশি ইয়েলো চেয়ারে বসতুম!”

No comments:

Post a Comment