Monday 2 May 2016

কাঁকড়া


“কুমীরভায়া! বাড়ি আছ নাকি?”

    সকালবেলা বাজার টাজার সেরে এসে চা আর কাগজ নিয়ে বসেছিলুম সবে। কন্যার আগমন। হাতে একটা বদখত শেপের পুঁটলি – ঘোরতর সন্দেহজনক হাসি মুখে।

    “অ্যাঁ! কে? কি?”

    “আমি কাঁকলা, তুমি কুমীর। আমরা বন্ধু-বন্ধু তো, তাই আমি তোমার বাড়ি বেড়াতে এসেছি।”

    ও আচ্ছা। তাড়াতাড়ি কাগজ গুটিয়ে ‘কাঁকড়া’কে বসবার জায়গা করে দিই। বসে না, পুঁটলিটা রাখে। রেখে বলে,

    “আমি এখন চান কব্বো। তোমার বাড়ির পিছনে পুকুর আছে সেখানে চান কব্বো। তুমি আমার জন্য খিচুড়ি রান্না করে রাখো।”

    “পুকুর আবার কই?”

    “আঃ!! তুমি কুমীর না? তোমার বাড়ির পিছনে পুকুর আছে বলছি!”

    চা খাওয়া মাথায় উঠলো। খিচুড়ি রান্নার জোগাড় করতে লাগতে হল – পিঙ্ক সসপ্যান, হলুদ থালা, নীল জলের গ্লাস ইত্যাদি। কাঁকড়া ওদিকে সোফা আর ডিভানের মধ্যের ফাঁকটায় নেমে পড়েছে – লাফিয়ে লাফিয়ে ‘পুকুরে’ চান হচ্ছে।

    পুঁটলিটা খুলে তার কাপড়টা দিয়ে তোয়ালে করেছে – সন্দেহজনক হাসিটার কারণ বুঝলাম এবার – কোন ফাঁকে আমার ড্রেসিং টেবিল খালি করে ক্লিপ আর চুড়ি তুলে এনেছে টেরই পাইনি। অন্যান্য মালপত্তরও সরেশ সব – একটা বল, একটা মাথা ভাঙ্গা পুতুল, একটা ট্রেনের ইঞ্জিন, বোলিং পিন দুটো।

    চান করে তিনি তো খেতে বসলেন। ওমা, দুগাল খেয়েই বলে, “চলি, আমায় আবার অনেকদূর যেতে হবে তো, অন্ধকার হয়ে গেলে মুক্কিল হবে।”

    বলে, নিজের যা যা জিনিস এনেছিল সেসব তো বটেই, এমনকি খিচুড়ির বাটি থালা গ্লাস অবধি সবশুদ্ধু পুঁটলি বেঁধে ফেলল। ছাঁদা বাঁধার চরম আর কি! অতিথি, কি আর বলি!

    যেতে গিয়ে, নিজেই জল ফেলেছিল কি কি করেছিল কে জানে, পা পিছলে ধুপ করে বসে পড়ল।  লাগে টাগে নি অবশ্য, তবে কিনা ‘বন্ধু’র সামনে পড়ে গিয়ে প্রেস্টিজ ক্ষুণ্ণ হল তো, তাই বাণী দিয়ে গেল, “কাঁকড়ার মত পাশাপাশি হাঁটতে ভুলে গেছিলুম কিনা, ঐজন্য পড়ে গেলুম!”

3 comments: