সব্বার আগে জলদস্যুর গল্পটা বলে নিই। সেই যে কেন্সিংটন গার্ডেনে জাহাজ – পাইরেট শীপ – দেখল? দেখে এসে অবধি তো তিতিরের মাথায় ওটা ঢুকে গেল। রোজ জাহাজের গল্প চাই শুতে গিয়ে। তো আমি গল্প শোনাতে শোনাতে শোনালুম জলদস্যু কি।
ব্যাস। পরদিন থেকে আমাদের খেলার তালিকায় জলদস্যু ও হই হই করে ঢুকে গেল। বিছানার এক প্রান্তে বালিশগুলো জড়ো করে জলদস্যু তিতিরের জাহাজ, আর অন্য প্রান্তে একটা ধুমসো লেপ পাট করে রেখে আমার ‘সম্পত্তি’র জাহাজ। সম্পত্তি রকমারি, কোনদিন ‘হীরে মুক্তো মণি মাণিক্য’, কোনদিন ‘কাপড় চোপড় জুতো মোজা’, কোনদিন ‘রাশি রাশি খেলনা’। একদিন জাহাজ ভর্তি ‘তেজপাতা’ও ছিল। মানে যেদিন জলদস্যুর যা লুঠ করার বাসনা আর কি!
খেলার নিয়ম আছে মনে রেখ, ভ্যাবলা ক্যাবলা ভালমানুষ বণিক জাহাজ নিয়ে মনের সুখে যেতে যেতে (জাহাজ চালাতে
চালাতে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে গান গাওয়াটা বাধ্যতামূলক) আচমকা দেখবে পাশের জাহাজ ‘হাড়গোড় আঁকা’ কালো পতাকা (অভাবপক্ষে রান্নাঘরের তোয়ালে) তুলেছে, মানে জলদস্যু। তখন সে ভয়ে খুব জোরে জাহাজ ছুটিয়ে পালাতে চেষ্টা করবে, কিন্তু পারবে না, অমিত বিক্রমে জলদস্যু তার জাহাজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়বে এই জাহাজে (তাক ঠিক না রাখতে পেরে টাল খেয়ে গেলে বণিকই তাকে ধরে ফেলবে, তাতে হাসির কি হয়েছে শুনি!)।
তারপর হবে যুদ্ধু! জলদস্যুর হাতে ‘কাসল’ থেকে কেনা নরম রবারের তলোয়ার,
বণিকের সম্বল মেকানো সেট দিয়ে বানানো তরোয়াল যার আবার মাঝে মাঝে স্ক্রু ট্রু
ল্যাগব্যাগ করে খুলে যায়। যুদ্ধুর শেষটা অবশ্য র্যান্ডম – আজ তিতির জেতে তো কাল আমি। একদিন দুজনেই দমছুট হয়ে একসাথে হার মেনে ফেল্লুম। তখন তিতিরের পরামর্শে জাহাজের মাল আধাআধি করে রফা করা হল। কি সাম্যবাদী মেয়ে বলো দিকি!
এবার উজানদাদার বাড়ির গল্প বলি এট্টু। আমার
বন্ধুর ছেলে উজান। আমরা বেশ কয়েকদিন তাদের বাড়ি গেছিলুম এর মধ্যে। তিতির তাতে যেমন
উজানদাদার ভক্ত হনুমান হয়েছে, উজানও তেমনি খুদে শিষ্য পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছিল। তিতিরকে
বগলদাবা করে, তার প্রিয় খেলা দাবা শেখাতে বসেছিল বিজ্ঞ দাদা। কিন্ত তিতির হল
‘কামারের এক ঘা’ পার্টি। বেশ খানিকক্ষণ ধৈর্য ধরে নিয়মগুলো শোনার পর যেই শুনল রাজা
আটকে গেলেই খেলা শেষ, অমনি রাজাটিকে টপ করে তুলে পকেটে ভরে ফেলবার চেষ্টা করছিল।
বেরসিক মায়ের হস্তক্ষেপে সেটা হল না। তারপর ঘোড়াগুলোয় চাপা যায় কিনা, গজ মানে হাতির
কেন শুঁড় নেই সেসব গবেষণা করল, শেষে বোড়েগুলো নিয়ে ‘ভিন্ডি ভাজা’ রাঁধার চেষ্টা
করছে দেখে উজানদাদা তার শিষ্যর দাবা প্রতিভা সম্বন্ধে হতাশ হয়ে রণে ভঙ্গ দিল।
খাসা দাদু-দিদুনও পেয়েছিল তিতির উজানদাদার বাড়ি। পেথথমবার এসে ভাব করে গেসল, পরের বার এসে তো পুরো গলাগলি দোস্তি হয়ে গেল দেখি। দাদু যাই বলছেন তিতির সেটা নার্সারি রাইমের সুরে শুনিয়ে দিচ্ছে, ফলে দিদুন হেসে কুটিপাটি, রান্না করতে যেতেই পারছেন না আর দাদু বেচারি স্পীকটি নট। তবে তাতে রাগ করার বদলে দেখি দাদু আরো তিতিরভক্ত হয়ে গেলেন, দুজনে মিলে ডাইনোসরের পিঠে কিভাবে স্পাইডারম্যানকে চড়ানো যায় যাতে পড়ে না যায়, সে গবেষণায় লেগে পড়ল।
সেইবারই, উজানদাদা স্পেসশীপ বানিয়ে দেখিয়েছিল। তারপর সায়েন্স মিউজিয়ামে গিয়েও আমরা রকেট, স্পেসশীপ এসব দেখলুম। তিতির মুগ্ধ। তারপর রাত্রিকালীন মা-মেয়ের আলাপচারিতা এই প্রকার –
“আমি না, বড় হয়ে স্পেসশীপ চাপব।”
“চেপে কোথায় যাবি? ”
“আমি দূ-উ-র থেকে পিথিবি দেখব। আথথ! ”
“বাঃ”
“দেখব পিথিবি কেমন লাট্টুর মত ঘোরে।”
“বেশ তো।”
“আর স্যাটানেও যাব। স্যাটানের কোমরে একটা ঐ বেল্ট আছে না? আমি ঐ বেল্টটার ওপর দাঁড়াব।”
“ওরে বাবা! আচ্ছা ঠিক আছে। যাবি।”
“যাবই তো! আমি হুশ করে পেসসিপ চালিয়ে দেব স্যাটানের দিকে।”
“আর মঙ্গলগ্রহ? রেড প্ল্যানেট? ”
কি জানি কেন তিতিরের মঙ্গলকে পছন্দ হল না।
“নাঃ! আমি আর যাব হচ্ছে চাঁদের বাড়ি। মুন।”
“ভেরি গুড। সে তো যাওয়াই যায়।”
“স্পেসশীপে চাপলে কি আমারও মাথায় শিং গজাবে? ”
“অ্যাঁ? শিং? ”
“ওই যে কারঠুনে দেখায় না? মাথায় কাঁচের গামলা পরে আর তার থেকে শিং বেরোয়? ”
“ওহ হেলমেট আর অ্যান্টেনা? তা দরকার হলে থাকবে বইকি! ”
“আমার শিং চাই। এক্ষুণি! ”
আলোচনা বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে দেখে কথা ঘোরালুম।
“স্পেসশীপে যেতে হলে কিন্তু অনেক পড়াশোনা করতে হবে তিতির। খুব ভাল করে।”
“তোমার মত বড় হলে? ”
“না মা, এখন থেকেই।”
“করব তো! মা স্পেসশীপ কি করে লেখে? ”
বানানটা বললুম।
“আমি কাল থী জিরো থাট্টি বার পেসসিপ লিখব। তুমি দেখিয়ে দেবে কেমন? ”
অতঃপর আমার ছোট্ট নভোচারী ঘুমের দেশে পাড়ি দিল। কে জানে কোন গ্রহে!
Khub enjoy korchhi. Bhalo, besh bhalo
ReplyDeleteKhub enjoy korchhi. Bhalo, besh bhalo
ReplyDeleteThank you :)
ReplyDelete