Sunday, 2 July 2017

কাক

ঘরের আলো নিভিয়ে  বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মনোযোগ দিয়ে ফোনের নোটে গ্রসারির হিসেব কষছিলুম। একাগ্রতার ভুষ্টিনাশ করে দিয়ে তিতিরপাখির প্রবেশ।

"মা আ আ আ আ! জানো আণ্টির কি হয়েছে?"

গ্রাসাচ্ছদনের জন্য গ্রসারির হিসেব জরুরি। কিন্তু এরকম প্রশ্নে গ্রসারির গ্রাস থেকে বেরোতেই হয়। তিতিরের এখনকার আন্টি বড়ই মিতভাষিণী। তাঁর কিছু হয়ে থাকলে আমি টের পাব না এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তিতির যে পরিমাণ উত্তেজিত, তাতে নেহাতই এলেবেলে কিছু হয়েছে বলে তো মনে হয়না।

"কী হয়েছে রে?"

"আন্টি না, কাল রাত্তিরে ঘুমোচ্ছিল। ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিল।"

সেটা আশ্চর্য কিছু না। ঘুমিয়েই থাকে। রাত্তিরে তো বটেই, দিনেও।

"আর একটা কাকও ঘুমোচ্ছিল।"

হিসেবের নিকেশ হয়ে গেল। আরেকটা গল্প আসছে মনে হচ্ছে।

"সব কাকই তো রাত্তিরে ঘুমোয় মা।"

"এই কাকটা আণ্টির ঘরের জানলায় ঘুমোচ্ছিল। খুব ঘুমোচ্ছিল।"

"আর নাক ডাকাচ্ছিল কি?"
গল্প বানানোয় আমার সাহায্য প্রদান।

"আরে না দ্যুৎ! কাক নাক ডাকায় নাকি!"
তিতির হেসে কুটিপাটি হয়ে যায়।

"আচ্ছা আচ্ছা, তারপর কী হল?"

"তারপর না, কাকটা ঘুমোতে ঘুমোতে ঘরের মধ্যে দ্দুম করে পড়ে গেল।"

"অ্যাঁ!!!"

"হ্যাঁ গো, জানলার রডে বসে ঘুমোচ্ছিল তো, পা পিছলে গেছে মনে হয় আর ঘরের মধ্যে এসে পড়ে গেছে।"

জন্মে এমন ন্যালাক্যাবলা কাকের কথা শুনিনি যে পা পিছলে পড়ে যায়। কিন্তু কটা কাকই বা আর এসে আমায় তার জীবনচরিত শুনিয়েছে! হয়তো তিতির সত্যি কথাই বলছে, হয়তো পদস্খলন ওদের জীবনেরও অঙ্গ।

"তারপর?"

"তারপর অমন আওয়াজ, আর কাকটা ঝটপট করছে, আণ্টি তো ভয়ে ধড়মড় করে উঠে বসেছে। আর আলো জ্বেলে দেখে ঘরে কাক পড়েছে।"

ডাকাত পড়ার সমান না হোক, ঘরে কাক পড়াটাও বেশ ভয়ানক ব্যাপার, সন্দেহ নেই। বিশেষ করে রাতের ঘুম ভেঙে।

"তারপর? বলবি তো পুরোটা!"

"তারপর কাকটা জানলা দিয়ে বেরিয়ে গেল আর আন্টি যেই না দরজা খুলে বেরোবে অমনি মুখের ওপর এসে পড়েছে।"

"অ্যাঁঃ! আবার কাক?"
ভীষণ উত্তেজিত হয়ে যাই। নবনীতা দেবসেন বারংবার চামচিকে কুড়িয়ে পেতেন জানি, তাঁর চলাচলের পথে তারা এসে ল্যান্ড করত। তাই বলে তিতিরের আন্টির ঘরে যত্রতত্র কাক পড়বে!

'আরে না, আমার মাছ-বেলুনটা। উড়ে এসে আন্টির মুখের ওপর, আর আন্টি না ভয় পেয়ে আঁই আঁই আঁই করে...হি হি হি"

অ। মাছ শেপের একটা বড় বেলুন কিনে দিয়েছি  কন্যাকে, সেটা যখন তখন পাখার হাওয়ায় উড়ে আলমারির মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছে বটে।

"আরো কী হয়েছে জানো?"

আবার কি! এবার কি বাথরুমে মহিলার মাথায় টিকটিকি পড়ল?

"আরে আন্টি ফিরে এসে ঘরে ঢুকে আলো নিভিয়েছে, আর আবার বেলুনটা উড়ে এসে মুখের ওপর আর আন্টি আবার আঁই আঁই আঁই আঁই...."

এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। মেয়ের মুখে যা হাসিটা দেখছি, এবার চুপ না করালে সারারাত ধরে আন্টির ঘরে কিছু না কিছু এনে ফেলতে থাকবে। কি ভাগ্যিস টিকটিকির কথাটা মুখ ফুটে বলিনি।

"তাই তো কি কাণ্ড! তোর আন্টি তো তাহলে কাল রাতে ঘুমোতেই পারেনি। তবে আন্টি একটু ভীতু বুঝলি, বেলুনে এত ভয় পাওয়ার কিছু তো নেই।"

বুঝিয়ে বাঝিয়ে, খিলখিলিনি এবং কিলবিলিনি  থামিয়ে মেয়েকে ঘুম পাড়াই। কাল ইস্কুল। তারপর হিসেবে প্রত্যাবর্তন করতে গিয়ে দেখি ফোনের ব্যাটারি কম, চার্জ লাগবে।

খাট থেকে পা-টা নামাতেই একটা সলিড জীবন্ত কিছু পায়ের পাতার ওপর এসে পড়ল। জোরে চেঁচিয়ে উঠছিলুম আরেকটু হলে। স্যাট্ করে পা উপরে তুলে নিয়ে ফোনের আলো ফেলে দেখলুম,

কুমীরের ল্যাজে পা দিয়েছিলুম বই তো নয়!

ইয়ে, মানে, তিতিরের খেলনা কুমীর। কাপড়ের।  সেটা কেন যে জীবন্ত মনে হল জানিনা।

ইয়ে, মানে, জানি, কিন্তু বলব না।

3 comments:

  1. তিতিরের জন্য অনেক অনেক আদর আর ভালবাসা রইল।

    ReplyDelete
  2. drighanchu aseni to? titirer songe bhab korte?

    ReplyDelete