এই পর্বটার নাম হওয়া উচিত ছিল “‘বাড়িতে গেস্ট ডাকিবার বিপদ’ অথবা ‘নির্মাল্লো
বধ’”। না না, বধ করে ফেলেনি সেই অর্থে, তবে বশ করেছে বিলক্ষণ।
নির্মাল্য একটি আদ্যোপান্ত খাসা
ছেলে, আমার ভাতৃতুল্য।
বেশ কিছুকালের আলাপ, এই ফেসবুকেই এবং তিতিরপাখির গল্পের সূত্রেই, তা সে পাকাপাকি
বোম্বের পাট গুটিয়ে পালানোর তোড়জোড় করছে শুনে বললুম, ‘একদিন আসবিনি?’
আমার এমন স্নেহময় ডাকের টানেই হোক,
কি সেই সঙ্গে খিচুড়ি ইলিশভাজার লোভ দেখিয়েছিলুম বলেই হোক, সুবোধ বালকটি ঠিক সময়মত
চলে এল এক ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সন্ধেবেলা, সাতিশয় লাজুক লাজুক মুখ করে।
তারপর টেডি বিয়ারে রূপান্তরিত হল।
মানে তিতির, এহেন গাবলু গুবলু
মামাটিকে, তার খাস তালুকের সম্পত্তি বিবেচনায় সেই যে বগলদাবা করল, ডিনার টাইমে
তাকে খেতে না বসানো অবধি আমরা আর নির্মাল্যর সাথে কথা বলার কোন সুযোগই পেলাম না!
এই অল্পসময়ে নির্মাল্যর কিন্তু
প্রভূত শিক্ষালাভ হল, যথা –
১) প্লাস্টিকের সাপ দিয়ে কি করে ভয়
দেখাতে হয়
২) ব্যাঙএর মত কি করে চলতে হয়৩) ন্যাড়ামুন্ডু পাজামা পরা ডলপুতুলকে কি করে কোলে-পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়
৪) কিভাবে মায়ের ট্যাবিতে গেম আনতে হয়
৫) আটটা বাজলে ঘড়ির কোন কাঁটা কোন ঘরে থাকে
৬) কিভাবে হামাগুড়ি দিয়ে চেয়ারের তলা দিয়ে টেবিলের নিচে ঢুকে আবার অন্যদিকের চেয়ারের তলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়
ইত্যাদি প্রভৃতি।
মোদ্দা, দুই শিশুর জমেছিল ভাল।
আমিও অবশ্য কিছু শিক্ষালাভ করলুম।
যেমন গেস্টের সাথে কথা বলার আশায় মেয়েকে ট্যাবে খেলার অনুমতি দেওয়া বৃথা। ট্যাব
এবং গেস্ট দুই-ই হাতছাড়া হয়ে যায় সে চেষ্টা করলে।
তার চেয়েও জরুরি হল, তিতিরকে শেখাতে হবে যে
আপ্যায়ন করতে বলা মানে, পিছন থেকে পা টিপে টিপে এসে তার কানের গোড়ায় আচমকা ‘ভালঅঅ
করে খাও!!!’ বলে চেঁচিয়ে ওঠা নয়!
যাইহোক, এইসব উৎপাত মামাটি হাসিমুখে সহ্য করল
(বলেছি তো ভারি ভাল ছেলে)। তারপর তিতির আর তাকে যেতে দিতে চায় না! খালি বলে, ‘তুমি
থাকো, তোমার ছাতাটা বাড়ি চলে যাক!’
শেষ অবধি আমার সাথে নিচ অবধি গিয়ে মামাকে বিদায়
জানিয়ে আসতে পারবে, এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে রাজি হল। তো, লিফটে উঠে দেখি মেয়ের জামার
বেল্ট থেকে একটা মাছধরা ছিপ ঝুলছে। জিগ্যেস করাতে তিনি খুব লজ্জা লজ্জা মুখ করে
জানালেন যে তিনি কিনা একটু আগে ডগি সেজে ঘুরছিলেন, তাই ওটা তাঁর ‘ল্যাজ্’।
ওমা, লিফট থেকে নামার সময় দেখি ছিপটা খুব করে
ফ্রকে চাপা দিচ্ছে।
‘কি হল রে?’
‘না বাবা, এখানের আসল কুকুরগুলো যদি আমার ল্যাজ
দেখে আমার সাথে ঝগড়া করে?’
তাও তো কথা! সুতরাং ঐ কোঁচড়ে ল্যাজ নিয়েই
পেল্লাই চিৎকার করে মামাকে ‘টা টা’ করা হল, তারপর একটাও আসল ডগি দেখে ফেলার আগেই
আমরা পাঁই পাঁই করে ঘরে পালিয়ে এলুম।
নির্মাল্যও ওদিকে পাঁই পাঁই করে পরিত্রাহি
পালিয়েছিল কিনা সেটা অবিশ্যি জানি না! দেখতে পেলে, জিজ্ঞেস করবেন তো!
No comments:
Post a Comment