একটা আস্ত আদ্যোপান্ত ছুটির দিন পাওয়া গেছিল দোসরা অক্টোবার। লং উইকেণ্ড হলেও, যেহেতু শুক্রবার তিতিরের জন্মদিন ছিল, আর শনিবার ছিল বিজয়া দশমী, তাই আর কোথাও যাওয়া টাওয়া হয়নি আমাদের। রোববার আয়েস করে, পুজোর ঘোরাঘুরির ধকল সামলে নিয়ে, সোমবার মা-মেয়ে নাচতে নাচতে চললুম বেই-বেই করতে।
কন্যা কিনা বড় হয়েছেন, 'সিক্স ঈঈর ওল্ড' হয়ে গেলেন সদ্য, তাই তিনি বাচ্চাদের মত পার্ক ম্যল সমুদ্দুর এসব না গিয়ে মিউজিয়াম যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। অবশ্য খেলার জায়গাগুলোতে না বলতে একটু ঢোঁক গিলতে হল, আর সমুদ্দুরটা প্রায় হ্যাঁ বলেই ফেলেছিলেন, তবু সামলে নিলেন, আর ছ বছরোপযোগী প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ গলায় ফরমান জারি করলেন যে তিনি মায়ের মত মিউজিয়ামে গিয়ে মূর্তি ছবি অস্ত্রশস্ত্রই দেখবেন। সুতরাং খেয়েদেয়ে মেয়ে ট্যাঁকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লুম।
না, প্রিন্স অফ ওয়েলস মিউজিয়াম নয়, যার অধুনা নাম ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ বস্তু সংগ্রহশালা। (এদের এই একটিমাত্র জাতীয় বীর হয়ে ভারি মুশকিল হয়েছে। ট্রেন স্টেশনও ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস, বিমানবন্দরও ছত্রপতি শিবাজী হাওয়াই আড্ডা, মিউজিয়ামও তাঁর নামে। ধরুন, আপনি প্লেনে এসে, তারপর স্টেশনের পাশে অবস্থিত মিউজিয়াম দেখতে গেলেন, তো কথ্য ভাবে বলতেই পারেন 'ছত্রপতি শিবাজী থেকে ছত্রপতি শিবাজীর পাশেই ছত্রপতি শিবাজী দেখতে যাচ্ছি।' পুরো সেই 'হরির উপরে হরি' কেস।) সে চমৎকার মিউজিয়াম, আমি বার চারেক গেছি, সুযোগ পেলে আবার যাব। কিন্তু সোমবার সেটা বন্ধ।
অগত্যা, বোম্বের প্রাচীনতম মিউজিয়ামে চললুম। এটির নাম আগে ছিল ভিক্টোরিয়া অ্যাণ্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম, সে নাম পালটেছে তবে ব্যতিক্রমী ভাবে ছত্রপতি শিবাজী নয়। হলে কিন্তু মানানসই হত, কারণ এটার অবস্থান রাজমাতা জিজাবাই উদ্যানে, চলতি কথায় যাকে বলে রানীবাগ। মায়ের কোলে ছেলে থাকতেই পারত, কিন্তু ইহা ছত্রপতি নহে, আমার অজ্ঞাত কোন কারণে এটার নাম ডা. ভাউ দাজি লাদ মিউজিয়াম।
চত্ত্বরটা তিতিরের ভালোই চেনা, এসেছে আগে অনেকবার। রানীবাগেই যে বোম্বের সবেধন নীলমণি চিড়িয়াখানা! আমার হাত ধরে তিতির গট গট করে ঢুকে পড়ল মিউজিয়ামের গেটে।
ঈঈক্! এ আবার কী হল রে! গোলাপী টালির পথ বেয়ে এঁকে বেঁকে হেঁটে আবার সেই রাস্তার ওপরেই বেরিয়ে পড়লুম যে! মিউজিয়ামটা গেলো কই?
আর কই। ইয়ে, মিউজিয়ামের বদলে ভুল করে পাশের মাঠের গেট দিয়ে ঢুকে গেছিলুম বই তো নয়! সেখানে পায়চারি করার পথ বেয়ে ঘুরপাক খেয়ে মা-মেয়ে আবার আমড়াতলার মোড়ে এসে পড়েছি। এই তিতির, অত হাসিসনে, ঐ তো পাশেই আসল গেটটা।
ঢুকতেই তিতিরের নতুন মিনি মাউস জলের বোতলটা বাজেয়াপ্ত করে নিল পুলিশ আঙ্কল। তিতির আঁই আঁই করে আমার কাছে নালিশ করায় পাশে বসা পুলিশ আন্টি হেসে ওর গালও টিপে দিলেন আবার।
তা মন্দ নয় কলেকশন। ভিক্টোরিয়ান ইন্টিরিয়র, কারুকার্য করা সিলিং, বাহারী সিঁড়ি। তবে আসল ঐতিহাসিক জিনিসের চেয়ে, মাটি দিয়ে তৈরী মডেল বেশি দেখলাম - মহারাষ্ট্রের গ্রাম, পাঠশালা, কুমোরশালা, কামারশালা, বিভিন্ন সম্প্রদায়, স্থানীয় সাজগোজ, খেলাধুলো, বাজনাবাদ্যি এসব। দাবা আর পাশা খেলার মডেল দেখতে পেয়ে তিতির মহা উত্তেজিত হয়ে আমার হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ছবি তুলে ফেলল, বাড়ি গিয়ে দাদুমণিকে দেখাবে। তিনি এখন তিতিরকে দাবা খেলার পাঠ দিচ্ছেন কিনা!
তারপর এমনকী ছ বছুরে ভদ্রমহিলারও ধৈর্য ফুরিয়ে গেলো। তখন তাঁকে নিয়ে গুটি গুটি বেরিয়ে পড়তেই হল।
সেদিনকে না তাপ্পর আরো মজা হয়েছিল, কিন্তু সেটা পরের বার বলব। তবে এইটুকু বলে যাই, যদিও আপনাদের তিতিরের পাল্লায় পড়ে খাওয়াদাওয়া করার চান্স খুব কম, তবু...
তবু, জেনে রাখুন -
চায়ে ডুবোনো কাঠি আইসক্রীম, এবং কাঠি আইসক্রীম ডুবোনো চা - দুটোই অতি বদখৎ খেতে হয়।
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteশেষ পর্যন্ত কাঠি আইসক্রিম মিশ্রিত চা ???!!!!
ReplyDeleteবেশ মজা হতো বুঝতে পারছি তিতিরের সাথে বেই বেই করতে গেলে
ReplyDelete