হার্ডওয়্যারের দোকান। গ্রসারি। মনোহারী স্টোর। বাসন কোসনের দোকান। ফুল পেন্টুল। আদা।
না ভুল করে ফর্দ লিখতে বসে যাইনি। এত কিছু সেরে বিকেলে বাড়ি ঢুকছি, সিঁড়িতে একটা চলমান খুদে ঝড়ের সাথে মুখোমুখি গোঁত্তা।
কে আবার! আমার তিতিরপাখি। দাদুমণির সঙ্গে বৈকালিক ভ্রমণে বেরোচ্ছেন।
আমায় দেখে তার ঝড়ত্ব আরো বেড়ে গেল। দুড়দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গিয়ে ঘোষণা করছে শুনতে পেলুম,
"দ্যাখো দ্যাখো ম-আকার এসেছে। ম-এ আকার এসেছে গো! জয় মা! মা কি জ্যয়! আমার ম-এ আকার এসেছে গো দিম্মা..."
এ আবার কি ছিরির সম্বোধন আজ! আমার ন-এ আকার ন-এ আকার করে চেঁচাতে ইচ্ছে হল।
তা সম্বোধনের কিছুই হয়নি তখনো। রাত্রে বুকের মধ্যে গুটিসুটি হয়ে মেয়ের প্রশ্ন,
"মাইয়া মানে কি গো?"
হুম। পাশে নভদুর্গার শেরাওয়ালী মায়ের প্যান্ডেলে গান বাজছে। নতুন নতুন শব্দ।
"মাইয়া মানে মা।"
"তাহলে আমি তোমায় মাইয়া বলে ডাকব আজ থেকে।"
"মাইয়া মানে কি গো?"
হুম। পাশে নভদুর্গার শেরাওয়ালী মায়ের প্যান্ডেলে গান বাজছে। নতুন নতুন শব্দ।
"মাইয়া মানে মা।"
"তাহলে আমি তোমায় মাইয়া বলে ডাকব আজ থেকে।"
খাইয়া...ছে!
"মাইয়া, ও মাইয়া!"
"কি মা?"
"আমি তো দুগগা মা? আমি তো শরণ্যা?"
"হ্যাঁ মা, তুমি আমাদের ছোট্টপানা দুগগা।"
"ওরা দুগগা মাইয়া কি জ্যায় বলছে। তুমি আমার জয় বলো?"
সোৎসাহে 'শরণ্যা কি জ্যয়' বলে রেহাই পাই।
"কি মা?"
"আমি তো দুগগা মা? আমি তো শরণ্যা?"
"হ্যাঁ মা, তুমি আমাদের ছোট্টপানা দুগগা।"
"ওরা দুগগা মাইয়া কি জ্যায় বলছে। তুমি আমার জয় বলো?"
সোৎসাহে 'শরণ্যা কি জ্যয়' বলে রেহাই পাই।
তবে সাময়িক।
"মাইয়া, একটা আইডিয়া।"
খুব, খুব সন্দেহজনক। রাত দশটার আইডিয়ারা, সাতাত্তর শতাংশ ক্ষেত্রেই খুব গোলমেলে হয়।
"কি আইডিয়া আবার? কাল ইস্কুল যে রে!"
মায়ের হাহুতাশ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে তিনি হাত পা নেড়ে ব্যাখ্যা করেন।
"আমরা চলো এখন দুজনে চেস্ট করি।"
কী করবো?!!!
হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকি।
তিনি অফিশিয়ালি দাবি পেশ করেন।
হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকি।
তিনি অফিশিয়ালি দাবি পেশ করেন।
"লেট আস ডু চেস্ট নাউ।"
"কী-ই-ই???"
"চেস্ট না চেস্ট না, চিস্ট। লেট আস ডু চিস্ট হোল নাইট।"
"কী-ই-ই???"
"চেস্ট না চেস্ট না, চিস্ট। লেট আস ডু চিস্ট হোল নাইট।"
হতভম্বতর হয়ে পড়ি।
'এত মূর্খ্ মাইয়া কে নিয়ে কি বা করা' ঢং এ তিতির বুঝিয়ে বলে, "কথা বলি! আমরা সারা রাত্তির গল্প করি হ্যাঁ?"
'এত মূর্খ্ মাইয়া কে নিয়ে কি বা করা' ঢং এ তিতির বুঝিয়ে বলে, "কথা বলি! আমরা সারা রাত্তির গল্প করি হ্যাঁ?"
যাস্ট পারলুম না, ঘর দোর কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে ফেললুম।
"ওরে মা রে, তুই চ্যাট করবি বলছিস?"
আহা, আহা, কি মিষ্টি লজ্জা পাওয়া দুগগা মাইয়া গো!
"হ্যাঁ হ্যাঁ, চ্যাট! লেট আস ডু চ্যাট।"
"ওকে, লেট আস চ্যাট। অ্যাবাউট হোয়াট? ছোটবেলার গল্প শুনবি নাকি তোর?"
"ইয়েসসসসসসস!"
শোনার আগেই তার নিজের বলা শুরু।
"হোয়েন আই ওয়াজ আ বেবি, আই ইট মিল্ক, আই ইট বিস্কিট ইন মিল্ক, বিস্কিট ইন মিল্ক ইজ ব্লু ব্লু, দেন আই ইট।"
কি বাজে ইংলিশ শেখাচ্ছে রে তোর স্কুলে! ছ্যা, এই নাকি ইংলিশ মিডিয়াম!
মুখে বলি, "যখন ছোট্ট ছিলি, দুধে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতিস, সে তো বুঝলুম। কিন্তু 'ব্লু ব্লু ' আবার কী?"
"বিস্কিট ইজ ব্লু ইন মিল্ক।"
ভেজা বিস্কুট বিচ্ছিরি বাদামী বা খয়েরী দেখতে হয়। সেটা নীল কেন হবে? মেয়েটা কি রংকানা হয়ে গেল!
নিজের বদলে তিতিরের মাথা চুলকে ফেলি ভুল করে। ব্লুয়ের কোন ক্লু পাইনা।
"আহহ, নরম হয়ে যায় না?"
"সফট?"
"এইয যাহ। হুঁ, সফট। নট ব্লু।"
বড় প্রতারিত বোধ করে চেয়ে থাকি। আমার সব শৈশবস্মৃতি-ই কি তুই রিপীট করবি?
সঞ্জয় গান্ধীর বিমান দুর্ঘটনার সময় আমি তিতিরের চেয়েও অনেক ছোট। তবে পড়তে পারি, খুব ছোট থেকেই পড়ার নেশা আমার।বাপির পাশ থেকে ঝুঁকে আনন্দবাজারে ইয়াব্বড় হেডিং পড়েছিলুম, "বিমান ভেঙে সঞ্জয় গান্ধী উপোস।"
নিহত কে কেন উপোস পড়েছিলুম জিগিয়ে লাভ নেই, জানি না। সফট কেন ব্লু হয় তাও না।
তিতির কিন্তু পরের আইডিয়ায় চলে গেছে।
"এই যে গ-আকার ন বাজছে, এটা কি দুগগা মায়ের ঘুমপাড়ানি গান?"
"না রে, এটা ডান্ডিয়ার মিউজিক। গান না হলে নাচবে কেমন করে।"
"ডান্ডিয়া? নাচ?"
বুঝিয়ে বলি।
পাঁই করে তক্ষুণি দিম্মার ঘরের জানলায় চলে যায় নাচ দেখতে। খানিক পরই অবশ্য দাদুমণি বকুনি দিয়ে শুতে পাঠান, কিন্তু উল্লাসে তো মেয়ে দু পায়ে দাঁড়াতেই পারছে না, শোবে কি?
তাপ্পর চুপি চুপি মা-মেয়ে মুণ্ডুতে মুণ্ডু ঠেকিয়ে প্ল্যান হয় কাল না, খেয়েদেয়ে না, দুজনে মিলে না, হুঁ হুঁ...হি হি...হুঁ হুঁ হুঁ!
খালি দিম্মাকে দিয়ে এক জোড়া ডাণ্ডা কিনিয়ে নিতে হবে বিকেলে। ওটা হয়ে যাবে বললেই।
হুঁ হুঁ হি হি হুঁ হুঁ....
খালি দিম্মাকে দিয়ে এক জোড়া ডাণ্ডা কিনিয়ে নিতে হবে বিকেলে। ওটা হয়ে যাবে বললেই।
হুঁ হুঁ হি হি হুঁ হুঁ....
না মশাই। অত লোভীর মত বসে লাভ নেই, এসব আমাদের গোপন কথা, সেই পদীপিসির নিমাই খুড়োর বাক্সের কাগজপত্তরের মত ঘোর পেরাইভেট জিনিস। মোট্টে বলব না।
এমনকি, আমরা যে তারপর আধা-অন্ধকার ঘরে দুজনে দুটো চিরুণী হাতে নিয়ে মিনিট দশেক কিছু একটা "প্যাকটিশ" করেছি, তাও আপনাদের বলছি না।
অনেক দিন পর তিতির পাখিকে আবার পেলাম। 😀
ReplyDelete