না, বাড়িতে দু দুটো মা থাকা ভারি গণ্ডগোলের ব্যাপার। আমি তো চিরকালের ভালমানুষ, নিপীড়িত, নিরীহ মানুষ - দিম্মা আর তাঁর 'নান্নী' দুজনে মিলে এইসা দেখভাল করছে আমার যে ত্রাহি মধুসূদন ডাক আসন্ন হয়ে উঠেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে মধুসূদন, অর্থাৎ দাদুমণি, বই-কাগজ কিছু একটার আড়ালে আত্মগোপন করে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন, কাজেই ডাক পাঠিয়েও লাভ বিশেষ নেই মনে হয়।
আপিশ থেকে ফিরলুম কি ফিরলুম না, দুই অসমবয়সী অসমায়তন মাতৃদেবী আমার দুহাত ধরে সমান ইন্টেন্সিটির ঝুলোঝুলি করতে লাগলেন - একজন তালের বড়া খাবার জন্য, অন্যজন ঘোড়া সেজে পিঠে নেবার জন্য। দুটোই মহৎ প্রস্তাব, কিন্তু একসাথে দুটো করা যে নেহাৎ অসম্ভব, সে চেষ্টা করাও যে মূর্খতা, সে তো বলাই বাহুল্য। আর পেটে দানাপানি না পড়লে কি আর ঘোড়া চলতে পারে, কাজেই আগে কোনটা করতে হবে তাও বোঝা সহজ। সুতরাং, 'ছোট্ট মা'টাকে ট্যাঁকসই করে, হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে টরেটক্কা বাজাতে লাগলুম।
"মা, ও মা, আজ না, জানো তো একজনকার জম্মদিন ছিল, পুঁ পুঁ বাঁশি দিছে।"
"একজনের জন্মদিন। দিছে না, দিয়েছে।"
"বাঁশি বাজাই, মা? বাজাই এনে?"
কেষ্টার বাঁশির যতই গুণগান গাওয়া হোক, খিদের মুখে কানের গোড়ায় পিলে চমকানো হুইসল মোটে ভাল না। বলে রাখলুম আপনাদের।
"কে রে এই বন্ধু?"
"আদ্রিজা রাজহাঁস।"
হাঁসদা পদবী হয় শুনেছি। তা বলে রাজহাঁস? জিগানোর আগে নিজেই শুধরে নিল, "রাজহাঁস না, রাজ। শুধু রাজ। আদ্রিজা রাজ।"
বেকুব হয়ে চেয়ে থাকি। রাজ কে রাজহাঁস বলছে! ভারতীয় ক্রিকেট দলের এক ক্যাপ্টেনের, মহারাষ্ট্রের এক বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার মুখগুলো মনে পড়ে। রাজহাঁস? পেটের মধ্যে কুলকুল করে হাসির ঘূর্ণি গজাচ্ছে টের পাই।
কিন্তু হাসতে পারি না। চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিডন স্ট্রীট থেকে বেরোনো একটা রাস্তার ফুটপাথ। সাদা স্কুলড্রেস পরা একটা তিতিরের বয়েসী মেয়ে আহ্লাদে লাফাতে লাফাতে তার মাকে দেখাচ্ছে, "মা মা ঐ দেখ দুর্বাসা যাচ্ছে!"
পূর্বাশা যদি দুর্বাসা হতে পারে, রাজ থেকে রাজহাঁস কি এমন ভুল!
তালের বড়ায় মনোনিবেশ করেছি, নতুন সমস্যার উৎপত্তি। মাতৃদেবী, মানে ছোটজন, আমার কোলে বসে বসে নিরীক্ষণ করে নাকি আবিষ্কার করেছেন, আমার একটা হাঁটু অন্যটার থেকে ছোট। আর অন্যটা নাকি এটার থেকে বড়। মানে ছোট-বড়। মানে গোলমেলে ব্যাপার আর কি!
কিছু করার ছিল না, পিঠে নিয়ে ঘোড়া হয়ে সারা ঘর হামাগুড়ি দিয়ে প্রমাণ করতে হল যে হাঁটুরা ঠিকঠাকই আছে।
কিন্তু প্রমাণ দাখিল করার পর উঠতে গিয়ে দেখি আর তারা ঠিক নেই। গেছে ছোটবড় হয়ে। উরি বাবা রে…
আমার করুণ দশা দেখে তাঁর স্নেহ উদ্রেক হল। আমায় একবাটি মুড়ি এনে দিয়ে বললেন "খাও, গায়ে জোর হবে"।
পেটে যে জায়গা খুব ছিল তা না। কিন্তু মাতৃ-আজ্ঞা, সে আজ্ঞাকারিণী যত ক্ষুদ্রাকারই হোক না কেন। একগাল খেতে না খেতেই শশব্যস্ত বাণী, "দাঁড়াও দাঁড়াও, শসা পেঁয়াজ কুচি করে রেখেছে আন্টি রান্নাঘরে, এনে দিচ্ছি।"
ইয়ে, লাউএর ঝিরি ঝিরি ফালি আর সরু করে কুচোনো বাঁধাকপি দিয়ে মুড়ি খেতে অতি বিদঘুটে হয়, কিন্তু আমি এখন হাসিমুখে সেটা খাচ্ছি।
খাব না? কচি কচি আঙুলগুলোর অ্যাত্তখানি ভালবাসা দিয়ে মাখা না!
আপিশ থেকে ফিরলুম কি ফিরলুম না, দুই অসমবয়সী অসমায়তন মাতৃদেবী আমার দুহাত ধরে সমান ইন্টেন্সিটির ঝুলোঝুলি করতে লাগলেন - একজন তালের বড়া খাবার জন্য, অন্যজন ঘোড়া সেজে পিঠে নেবার জন্য। দুটোই মহৎ প্রস্তাব, কিন্তু একসাথে দুটো করা যে নেহাৎ অসম্ভব, সে চেষ্টা করাও যে মূর্খতা, সে তো বলাই বাহুল্য। আর পেটে দানাপানি না পড়লে কি আর ঘোড়া চলতে পারে, কাজেই আগে কোনটা করতে হবে তাও বোঝা সহজ। সুতরাং, 'ছোট্ট মা'টাকে ট্যাঁকসই করে, হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে টরেটক্কা বাজাতে লাগলুম।
"মা, ও মা, আজ না, জানো তো একজনকার জম্মদিন ছিল, পুঁ পুঁ বাঁশি দিছে।"
"একজনের জন্মদিন। দিছে না, দিয়েছে।"
"বাঁশি বাজাই, মা? বাজাই এনে?"
কেষ্টার বাঁশির যতই গুণগান গাওয়া হোক, খিদের মুখে কানের গোড়ায় পিলে চমকানো হুইসল মোটে ভাল না। বলে রাখলুম আপনাদের।
"কে রে এই বন্ধু?"
"আদ্রিজা রাজহাঁস।"
হাঁসদা পদবী হয় শুনেছি। তা বলে রাজহাঁস? জিগানোর আগে নিজেই শুধরে নিল, "রাজহাঁস না, রাজ। শুধু রাজ। আদ্রিজা রাজ।"
বেকুব হয়ে চেয়ে থাকি। রাজ কে রাজহাঁস বলছে! ভারতীয় ক্রিকেট দলের এক ক্যাপ্টেনের, মহারাষ্ট্রের এক বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার মুখগুলো মনে পড়ে। রাজহাঁস? পেটের মধ্যে কুলকুল করে হাসির ঘূর্ণি গজাচ্ছে টের পাই।
কিন্তু হাসতে পারি না। চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিডন স্ট্রীট থেকে বেরোনো একটা রাস্তার ফুটপাথ। সাদা স্কুলড্রেস পরা একটা তিতিরের বয়েসী মেয়ে আহ্লাদে লাফাতে লাফাতে তার মাকে দেখাচ্ছে, "মা মা ঐ দেখ দুর্বাসা যাচ্ছে!"
পূর্বাশা যদি দুর্বাসা হতে পারে, রাজ থেকে রাজহাঁস কি এমন ভুল!
তালের বড়ায় মনোনিবেশ করেছি, নতুন সমস্যার উৎপত্তি। মাতৃদেবী, মানে ছোটজন, আমার কোলে বসে বসে নিরীক্ষণ করে নাকি আবিষ্কার করেছেন, আমার একটা হাঁটু অন্যটার থেকে ছোট। আর অন্যটা নাকি এটার থেকে বড়। মানে ছোট-বড়। মানে গোলমেলে ব্যাপার আর কি!
কিছু করার ছিল না, পিঠে নিয়ে ঘোড়া হয়ে সারা ঘর হামাগুড়ি দিয়ে প্রমাণ করতে হল যে হাঁটুরা ঠিকঠাকই আছে।
কিন্তু প্রমাণ দাখিল করার পর উঠতে গিয়ে দেখি আর তারা ঠিক নেই। গেছে ছোটবড় হয়ে। উরি বাবা রে…
আমার করুণ দশা দেখে তাঁর স্নেহ উদ্রেক হল। আমায় একবাটি মুড়ি এনে দিয়ে বললেন "খাও, গায়ে জোর হবে"।
পেটে যে জায়গা খুব ছিল তা না। কিন্তু মাতৃ-আজ্ঞা, সে আজ্ঞাকারিণী যত ক্ষুদ্রাকারই হোক না কেন। একগাল খেতে না খেতেই শশব্যস্ত বাণী, "দাঁড়াও দাঁড়াও, শসা পেঁয়াজ কুচি করে রেখেছে আন্টি রান্নাঘরে, এনে দিচ্ছি।"
ইয়ে, লাউএর ঝিরি ঝিরি ফালি আর সরু করে কুচোনো বাঁধাকপি দিয়ে মুড়ি খেতে অতি বিদঘুটে হয়, কিন্তু আমি এখন হাসিমুখে সেটা খাচ্ছি।
খাব না? কচি কচি আঙুলগুলোর অ্যাত্তখানি ভালবাসা দিয়ে মাখা না!
No comments:
Post a Comment