“ইঁ
ইঁ ইঁ!”
“এতবার
পড়ে শোনানো হয়েছে, ছবিতে রামায়াণ পড়ছ, সিনেমা দেখছ, আর গল্প বলতে পারবে না! না, আমায় গল্প বলতেই হবে আজ!”
বেয়াড়া মাকে
জাপটে সাপটে ধরে, পেটে ঠ্যাং তুলে দিয়ে অতএব, তিনি শুরু করেন,
“ওই
যে, দশরথ শিকার করতে গেছে আর ভেবেছে হঈণ জল খাচ্ছে আর ধাঁই করে তীর মেরে দিয়েছে আর অন্ধমুনির ছেলে ছিল কিন্তু আসলে।
তারপর
মন্ত্রী বলল শাপে বর হয়েছে, ছেলে না হয়ে যায় কোথায়!
তারপর
পায়েস খেল, ইয়াম ইয়াম করে খেল। আচ্ছা মা চালের পায়েস না চাউমিনের পায়েস?”
“জানি না বাপু।
ধর সুজির পায়েস।”
“খেল।
তাপ্পর ছেলে হয়ে গেল। রাম, লক্ষোণ, এঁ এঁ এঁ…”
ধরিয়ে
দিই। ভরত, শত্রুঘ্ন। অমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের গতিতে আমাদের রামায়ণ চলতে থাকে।
“তাপ্পর
একটা দাড়িওলা রাগী লোক এসে নিয়ে গেল, আর সেখানে তাড়কা হাঁউ মাউ করছিল তাকে মেরে ফেলল।
হ্যাঁ
আর তাপ্পর মাটি খুঁড়তে গিয়ে সীতা পেল আর তাপ্পর পটাং করে ধনুক ভেঙে সীতাকে বিয়ে করে ফেলল।
তারপর
তিনজন মিলে জঙ্গলে চলে গেল।
তারপর
জঙ্গলে একটা রাক্কোশ সোনার হঈণ সেজে এল আর রাম যেই তীর মেরেছে অমনি রামের গলা করে "বাঁচাও! বাঁচাও!"”
“কান
ফুটো করে দিস না বাপু। অমন চেল্লাস কেন?”
“আহ।
দেখাচ্ছি সোনার হঈণ কেমন....”
টপ
করে থামাই। এত চেঁচালে পাশের ঘরে দাদুর ঘুম ভেঙে যাবে।
“হ্যাঁ, তাপ্পর?”
“তাপ্পর
সীতা লক্ষোণকে বলল, "আভি যা!"”
“অ্যাঁ?”
“না, ইয়ে, বলল যাও গিয়ে দাদাকে উদ্ধার করো। আর লক্ষোণ দাগ কেটে রেখে গেল। আচ্ছা মা, লক্ষোণরেখা দিয়ে তো আরশোলা আটকায়। রাবণ কি তার মানে আরশোলা ছিল?”
(বিষম
খাইতে নাই। তুমি মাম্মা, তুমি অসীম ক্ষমতাধারিনী।)
“উম্মম, না, আরশোলা না। মানে অবাঞ্ছিত সব আটকায় আর কি!”
“মানে?”
“মানে, যা আমরা চাই না, তেমন।”
“আচ্ছা।
তাপ্পর অবান্নন্ননছি-তো রাবণ এসেছে, সাধু সেজে এসেছে, আর ভিক্ষা চেয়েছে। আর সীতা যেই ভিক্ষা দিতে বাইরে এসেছে অমনি ধরে নিয়ে রথে চেপে না...টকাটক টকাটক..টকাটক টকাটক...
টকাটক টকাটক...
টকাটক টকাটক...”
চলতেই
লাগল ফাটা রেকর্ডের মত। ওরে থাম তারপর বল!
“হ্যাঁ
তাপ্পর রথটা এরোপ্লেন ছিল, হুশ করে আকাশে উড়ে গেল। সীতা বাঁচাও বাঁচাও করল আর গয়নাগাটি ফেলে দিল। আচ্ছা মা, সীতা কি সীতাহার পরত?”
“হ্যাঁ
সীতাহার সীতাচুড়ি সীতাদুল সব পরত। তুই গল্পটা শেষ কর।”
(গোপনে
হাই তুলি)
“তারপর, হি হা হা হা হা! জটায়ু আয়া। খুব যুদ্ধো হল, ঘ্যাচাং ঘুচুং করে। এমনি এমনি...তাপ্পর এমনি এমনি...তাপ্পর না... ডানা কেটে বধহহহহহহ!”
(ঘুমের
দফারফা। তিনি ততক্ষণে পেটে চড়ে বসেছেন আমার।)
“ওরে
আমি জটায়ু নই রে। আমার কাঁধে কোপ মারলে কাল সকালে বাজার কে করবে!”
“আচ্ছা
মাম্মা! তাহলে আমি হুনুমান হয়ে সমুদ্দুর পেরোই?”
এরপর
সব মায়েদের যা করতেই হয়, তাই করি অগত্যা। আঁকড়ে পাঁকড়ে বালিশে ফেলে দুটো থাবড়া দেওয়ার অপেক্ষা খালি, আমার উড-বী-হুনুমান হাসি হাসি মুখ করে ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।
বেচারী সীতা অশোকবনে বন্দী হয়েই পড়ে থাকে একা একা, আপাতত। আবার কাল রাত্তিরে তার রেস্ক্যু মিশন চালু হবে হয়তো।
কিংবা হয়তো আর কোনদিন হবে না, ছোট্ট হুনুমান বড় হয়ে সত্যি সত্যি হয়তো সাগর পেরিয়ে চলেও যাবে দিগন্তের খোঁজে। তার ছোটবেলার কাঁচা কথার আঁচড়ে আঁকা লঙ্কাপুরীতে রাক্কোশেরা বেবুনের ঠ্যাং ভেজে খাবে আর রাবণ বাহারী জামা পরে রাজসভায় বসে নখের পরিচর্যা করে যাবে। আর সীতা? সে অনন্তকাল গাছের তলা্র বেদীতে মুখ ভার করে বসে থাকবে।
আমার প্রয়োজনও ফুরোবে, আমিও হয়তো তখন তার পাশে গিয়ে বসব, ঐরকম এক হাঁটু উঁচু করে তার ওপর থুতনি রেখে, চিরকালের মত।