"মঈশাসুর বলো!"
রোজ রাত্তিরে নতুন নতুন মইশাসুরের
গল্প পাই কই বলুন দিকি। না বললে, ঘুমোতেও দেবে
না। অগত্যা, যা আসে মাথায়...
“মঈশাসুরের না, কদিন ধরে দাঁতে ব্যথা। ‘এঁ এঁ’ করে কান্নাকাটি করছে। দুগগামা তখন ঠিক করল দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে
যেতে হবে।
কোথায় যাবে? না সুশ্রুত ডাক্তারের চেম্বারে যাবে।“
"অ্যাঁ মা? কী
বলছ? 'সুড়সুড়ি-তো' মানে?"
“না রে, সুশ্রুত। ওটা তোর মানিকমামার ভালো নাম।“
“সুশ-শুরু-তো? ইশ কী ভালো ভালোনাম। তুমি কেন এটা আমার নাম রাখোনি?
এই খেয়েছে।
“তা কেন, শরণ্যাও তো কত সুন্দর...”
“না, আমি আজ থেকে সুশ্রুত হব। তুমি আমার নাম পালটে দাও।“
সব্বোনাশ করেছে।
“ওরে ওটা ছেলেদের নাম হয়। বয়। তুই তো গার্ল।“
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মেনে
নিল। গদাম করে পেটে পা তুলে দিয়ে বলল, তাপ্পর
বলো।
“হ্যাঁ তো মানিকমামার কাছে যাওয়া
যখন হবেই (ভয়ে আর ভাল নাম উচ্চারণ করি না), দুগগামা
সবাইকেই নিয়ে চলল।“
“লক্ষী সয়োস্বোতী কাত্তিক গণেশ?
“হ্যাঁ রে সব্বাইকে। সবার দাঁত দেখিয়ে
আসবে। চাই কি নিজেরটাও, আচ্ছা না থাক…তো গেছে বুঝলি। মানিকমামার চেম্বার হয়ে গেছে তখন ইয়া বড়। সাদা কোট পরে ভারভারিক্কি
মানিকমামা রুগী দেখছে। এরা তো ঢুকে বসেছে। আর মঈশাসুর দাঁতের
ব্যথায় দুগগামার আঁচল এক হাতে চেপে ধরে মাটিতে গড়াগড়ি পুরো।
তখন মানিকমামা বলছে, ওকেই আগে নিয়ে এসো দেখি।
দুগগামা তো মঈশাসুরের কান ধরে উঠিয়ে
নিয়ে গিয়ে রুগীর চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে। মঈশাসুর জল কুলকুচি করেছে। মানিকমামার কথামত
হাঁ -ও করেছে।
‘এ বাবা!! এর তো আদ্ধেক
দাঁত পচে গেছে রে! নিশ্চয় খালি চটচটে চকলেট বুড়ির চুল চিনি এসব
খায়!! নাহ, এর তো দাঁত তুলতে হবে,
গর্ত ফিলিং করতে হবে অনেক কাজ!’
এই না বলে মানিকমামা যেই না
ইঞ্জেকশন দিতে গেছে...”
“ইঞ্জেকশন!!!”
“ওমা নইলে দাঁত তুললে লাগবে না? আগে তো ইঞ্জেকশন দিয়ে
অসাড় করে নিতে হয় যাতে ব্যথা না লাগে।“
“বেশ হয়েছে! তাপ্পর মাম্মা?”
“তাপ্পর আর বলিস না, যেই না মানিকমামা ইঞ্জেকশন বাগিয়ে এসেছে, মঈশাসুর গাঁক করে চেঁচিয়ে হাত পা ছুঁড়ে লাফিয়ে সোজা পাশের আলমারির মাথায়
চড়ে বসেছে! আর সে আলমারি এত উঁচু, কারো হাত যাচ্ছে না।
দুগগা মা, মানিকমামা অনেক সেধেছে , খেলনা দেব
বলেছে, বই দেব বলেছে, বকেছে, ভয় দেখিয়েছে, কিন্তু সে আর নীচে নামেই না!
তখন মানিক মামা বলল, আচ্ছা থাকুক ও বসে। আমি বাকিদের ততক্ষণ দেখে নিই। ব্যথা যেই বাড়বে ঠিক নেমে আসবে।
লক্ষ্মী তো খুবই লক্ষ্মী, দুবেলা দাঁত মাজে। ওর দাঁত দেখে মানিকমামা বলল, ফাস্টো কেলাস। সরস্বতীরও দাঁতও খাসা, কিচ্ছুটি নেই। এমনকি কাত্তিকেরও দাঁতে গত্ত নেই, খালি একটু প্লেক হয়েছিল সে ঘষে সাফ করে দিতেই হয়ে গেল। আর গণশার...”
“গণশার তো হাতির দাঁত!”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, মানিকমামা বলল একে তো আমি দেখতে পারব না, আমার বন্ধু হাতির ডাক্তার, তার ফোন নাম্বার দিয়ে
দিচ্ছি তার চেম্বারে নিয়ে যাবেন একে।
তারপরও মঈশাসুর নামে আর না! তখন
দুগগা মা খুব খেপে গিয়ে, ত্রিশূলটা নিয়ে দিয়েছে তার পিঠে এক
খোঁচা, আর মঈশাসুর যেই আঁতকে উঠে লাফিয়ে পড়েছে অমনি
মানিকমামা টপ করে তাকে লুফে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে। আর দুগগামা দশ হাতে তার হাত পা সব চেপে ধরেছে, আর মানিকমামা দিয়েছে পটাং করে ইঞ্জেকশন দিয়ে।
মঈশাসুর তখন যা চেঁচান চেঁচালো
না! মানিকমামার তো কানে তালা লেগে গেল,
আবার বাইরে গিয়ে চাবিওলার থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলল। তারপর এসে দুটো দাঁত তুলে দিল আর বাকি গত্ত বুঁজিয়ে
দিল। মঈশাসুরের তো তাপ্পর মুখ ফুলে ঢোল আর কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। বাড়ি এসে দুধে
ভিজিয়ে পাউরুটি খেলো আর ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেলো।“
এরপর আমারও কানে তালা লেগে গেছিল
কিন্তু কে চেঁচিয়েছিল সেটা আমায় বলতে বারণ করা হয়েছে। তবে চুপি চুপি নাম না করে বলছি, সেও পরদিন ব্রেকফাশে দুধে ডুবিয়ে পাউরুটি খাবে বলেছিল, আর তার একটু পরেই ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেছিল।
No comments:
Post a Comment