Sunday 31 March 2019

ফায়ার ড্রিল

তিতিরদের ইক্কুলে ফায়ার ড্রিল করায়, জানো? হঠাৎ করে আগুন টাগুন তো লাগতেই পারে, যেকোনো জায়গাতেই । শট্‌ সাক্কিট্‌ হতে পারে, আরো কত কী!
তো তেমন হলে কী করবে?
দাদুমণিকে এইসব শিখতে হচ্ছে এখন। দাদুমণি কিনা অনেক অনেক দিন আগে ইক্কুলে পড়েছিল, তখন এসব শেখাত না!
আর আন্টিকেও। আন্টি কিনা গ্রামের ইক্কুলে পড়েছে।
মায়ের আপিশে এসব হয়, হলে আবার সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে হেঁতে এগারোতলা নামায়, তাই মায়ের ছাড় আছে।  
“এই মনে করো তুমি বসে আছো, এই মনে করো ফায়ার অ্যালার্ম বাজল, এই মনে করো সিঁড়ি”
পাশ দিয়ে যেতে যেতে মা ফুট কাটে, “এই মনে করো গেছো বৌদি রান্না করছে, এই মনে করো গাছের গায়ে একটা ফুটো...”
গুঁতিয়ে, ঢূঁসিয়ে, ঠেলে মূর্তিমান উৎপাতকে বিদ্যায় করে আবার টিচারের ক্লাস চলে।
 “সিঁড়ি বুঝেছ – লিফটে যাবে না কিন্তু ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে, হুঁ, আটকে যাবে, বুঝবে তখন!”
মা চুপি চুপি উঁকি মেরে দেখে, ভারি আমোদ লাগে নাকে গোল চম্মা মেয়ের গ্রাম্ভারি চালচলনে। আহা, তাদের সময়ে তো আর এসব ছিল না! স্কুলে লিফটই বা তখন কই!
“দরকারি জিনিস সব গুছিয়ে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যাবে দরজা দিয়ে। সোওওওওজা নিচে, ফাঁকা জায়গায়। দাঁড়াবে না, আবার ঠেলাঠেলিও করবে না।“
ওমা, এসবের কয়েকদিন পরেই, রাত্তিরে যেই না মা টিভি চালিয়েছে, অমনি ঘরের আলো গুলো ধুকপুক করতে লাগল। মা তো অমনি টিভি ফ্রিজ সব বন্ধ করে ইলেক্টিক্কাকুকে ডেকে পাঠাল।
“কী হঁবে? ও মাঁ কীঁ হবে?”
“থাম বাপু। দেখছিস তো কাকু কাজ করছে!”
এদিকে কাকু টুলে চড়ে প্যাঁচ কষতে কষতে “শর্ট সার্কিট” শব্দ উচ্চারণ করে ফেলেছেন। অমনি ছোটজন হাউমাউ করে, হুলুস্থূল করে, পিঠে পটাং করে স্কুলব্যাগটা গলিয়ে রেডি।
অন্ধকারে বুঝিনি তখন, পরে আন্টির থেকে শুনলুম, আমি যখন কাকুর সঙ্গে টর্চ বাগিয়ে  নেত্য করছি, তিনি নাকি তাঁর সব দরকারি জিনিস নিয়ে তক্ষুনি ঘরে ছেড়ে বেরিয়ে চলে যাবেন বদ্ধপরিকর হয়ে পড়েছিলেন। ভুলিয়েভালিয়ে বহু কষ্টে তাঁকে শান্ত করা গেছে।
রাতে শুতে এসে জিগালুম, “হ্যাঁরে, পিঠে স্কুলব্যাগ চাপিয়ে দাঁড়িয়েছিলি কেন?”
“যদি শট্‌ সাক্কিট্‌ হত? দরকারি জিনিস গুছিয়ে নিয়ে নেমে যেতে হত না?”
তা হত বটে, মানতে বাধ্য হই। আচ্ছা, স্কুলব্যাগটাই সবচেয়ে দরকারি মনে হয়েছে কন্যার। তা বেশ।
“আর বাঁহাতে পঈসা ফেলার ব্যাঙ্কটা নিয়েছিলুম।“
একটা পিগিব্যাঙ্ক আছে বটে। চেয়ে, ভাল কাজ করে, বাজারের ব্যাগ থেকে কুড়িয়ে, মাকে পটিয়েপাটিয়ে বা কেড়ে নিয়ে এরকম নানা উপায়ে সেটা প্রায় ভর্তিও হয়ে এসেছে।
গুড, গুড, ভেরি গুড। একই সঙ্গে লক্ষ্মী সরস্বতী দুই-ই দরকারি বুঝতে শিখে গেছে। এ মেয়েকে আর ঠেকায় কে!
“তা হ্যাঁ রে, ডান হাতটা খালি রাখলি কেন? তাতে আর কিছু দরকারি জিনিস নিবি না?”
তারপর, দুটো মাথার বালিশ ঠেকাঠেকি করে, গায়ে গায়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে, একটা ‘দরকারি জিনিস’ খুব লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে আসা গরম জলটা মুছে নেয়।
“ওমা, নেব তো! ও হাতে তো তোমার হাত ধরব। নিয়ে না গেলে যদি পড়ে থাকো একা একা?”


No comments:

Post a Comment