একে তো অফিস ছিল। শুধু অফিসই ছিল না, কাজও ছিল পাগলপারা।
বাড়ি এসে তিতির ও তার দিম্মাকে নিয়ে ফের বেরোলুম ঘুরতে। বচ্ছরকার দিন বলে
কথা! ঘুরতে ঘুরতে খেয়াল হল, ঘরে পরার চটির স্ট্র্যাপ পটাং হয়েছে। আহা, কী আনন্দ,
এই তো নতুন কিছু কেনার উপলক্ষ্য পাওয়া গেছে!
ডি-মার্ট থেকে যখন বেরোলাম, একহাতে দু লিটার কোল্ডড্রিঙ্ক, অন্যহাতে ঠাসা
উপচে পড়া থলি, সে এত ভারী যে বেঁকে গেছি সেদিকে।
ওদিকে আমি কিন্তু নিজের জন্য ওই একজোড়া ঘরে পরার হাওয়াই-ই কিনেছি!
বাকিসব "কোথা হইতে কী হইয়া গেল" কেস।
বাড়ি এসে দেখলুম, প্লে ডো। স্বাভাবিক। তিতির গত কয়েকদিন ধরেই এটার বায়না
করছিল। তারপর আরো দুই না তিন জোড়া ধুমসো হাওয়াই চটি। কার, কেন, কিচ্ছু জানি না।
একটা বদখৎ দেখতে হাতা, তার সবটাই প্রায় ফুটো। 'খামোকা দাম দিয়ে ফুটো কিনেছ কেন'
বলতে যাওয়ায় যুগপৎ দিম্মা-নান্নীর কণ্ঠনির্ঘোষে যে প্রতিবাদসমুদ্র উৎপন্ন হল তার
কথা আর না বলাই ভালো।
তার প্রতিশোধও নিয়েছি অবশ্য। হাতে পেলুম একটা কাপড়ের টুকরো, সেটা ঝাড়নও হতে
পারে, ঘরমোছা ন্যাতাও হতে পারে, এমনকী পাপোশ হলেও আশ্চর্য হব না। পাওয়ামাত্র
সুন্দর করে মায়ের বাথরুমের রডে টাঙিয়ে দিয়ে এসেছি, কাল চেঁচামেচি করলে বলব
ভেবেছিলুম তোয়ালে বুঝি।
তারপর আরো হাজার গণ্ডা কাজ সেরে ফেললুম।
দিনের শেষে, ক্লান্ত শরীরে ধুপুস করে বিছানায় পড়ে যাবার পরেও দিন ফুরোয় না।
"মা, ও মা?"
"উঁ?"
"সারপ্রাইজ! এই নাও।"
একটা নানারঙের প্যাস্টেল কালারের দাগে ছয়লাপ পুরোনো পেন্সিল বক্স, যাকে
কোনো অজ্ঞাত কারণে তিতির "কম্পাস" বলে। এবছর নতুন কম্পাস পেয়েছে নতুন
ক্লাসে উঠে, তাই এটা বাতিল হয়েছিল। সেইটি হাতে ধরিয়ে দিয়ে, মেয়ে আগ্রহে
হুমড়ি খেয়ে বুকে উঠে পড়ে প্রায়।
"খোলো না? খোলো?"
খুলি।
দুটো পেন। ইয়ার ফোন। আপিশের ড্রয়ারের চাবি। ফোন খোলার কাঠি। গ্লু
স্টিক।
আপিসের ব্যাগের বাইরের খোপে পড়ে থাকে এগুলো। দরকারমত হাতড়ে বার করে
নিই।
পরিপাটি গুছিয়ে রাখা।
আর একটা পুঁচকে প্লাস্টিকের ল্যাজমোটা শেয়াল।
"ওইটে নিয়ে খেলবে মাঝে মাঝে, হুঁ? তোমায় পয়লা বৈশাকে দিলুম, তোমার তো
কম্পাস নেই একটাও..."
নববর্ষে নতুন জিনিস গিফট করার নিয়ম যে করেছিল সে কিচ্ছুই জানে না। আমার যেন
বছর বছর এমন বাতিল গিফটই জোটে।
ভালবাসার পুরোনো হয় না যে!
No comments:
Post a Comment