Monday, 21 May 2018

মিষ্টু



একটা না, ভারী মিষ্টি মেয়ে ছিল তার নাম ছিল মিষ্টু

তার মিষ্টি মুখে মিষ্টি হাসি ছিলো, মাথায় কোঁকড় কোঁকড় চুল ছিলো এক থোপা, চশমার আড়ালে ঝকঝকে দুটো খুশি-খুশি চোখও ছিল

আর ছিলো এই এত্তখানি রাগ গাল ফুলোনো, নাক দিয়ে ধোঁওয়া, কান দিয়ে আগুন বেরোনোর মত এক্কেবারে ফ্রেশ, চনমনে রাগ সে রাগের সামনে তার মা বেচারী কাঁচুমাচু, আর টুপমাসি পার্মানেন্ট আড়ি খেয়ে কুপোকাৎ!

কেন? ওমা, রাগ হবে না! তার টুপমাসি যে বেহদ্দ জেলিফিশ! তাকে গল্প লিখবে প্রমিস করে বেমালুম ভুলে তো গেছেই, আবার বলছে নাকি কী কী হয়েছিল সেদিন সেটাও ভুলে মেরে দিয়েছে! এরকম বেয়াক্কেলে মাসিমণিকে নিয়ে কী করা যায় তোমরাই বলো! মিষ্টু কি যে সে নাকি, মিষ্টু হল তিতিরপাখির গল্পের সবচেয়ে ছোট পাঠক যে কিনা আবার কমেন্টও করে! আর প্রমিস ইজ প্রমিস! যারা প্রমিস করে এরকম ভুলে যায় তাদের নাকে যেন বারোমেসে সর্দি হয়!

তো সেদিন কী হয়েছিল জানো?

সেদিন মিষ্টু না, তার মায়ের সঙ্গে গেছিল তিতিরপাখির সঙ্গে দেখা করতে দুখানা কাছাকাছি সাইজের টর্ণেডো একসাথে ছেড়ে দিয়ে দেখেছো কী হয়? মিষ্টুর মা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে তার এমনিতে লক্ষ্মী শান্ত বুঝদার কন্যা, যোগ্য চ্যালার হাতে পড়লে মা কী ছিলেন আর মা কী হইয়াছেন গোছের ব্যাপারস্যাপার হয়ে যেতে পারে

প্রথমে ডল হাউস নেমে পড়ল এইটে তিতিরের মা সদ্য তিতিরকে কিনে দিয়েছে, তাই এখনো মোটের ওপর আস্ত আছে ব্যাপারটা খানিক পরেই দেখা গেলো, অ্যালিস যেমন সেই চাবির ফুটো দিয়ে একচোখে উঁকি মারছিল, এরা দুটোতে সেরকম মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে, ডলহাউসের ফার্নিচার সেট করছে না বাপু, কমোডটা কে বসিয়েছে আমি দেখতে যাইনি – যেই হোক সে যে তারপর হাত ধোয়নি এটা নিয্যশ বলতে পারি

তারপর, প্লে ডো বের হ এটা মিষ্টু নিয়ে এসেছিল বোনুর জন্য কত রকম রং! তা দিয়ে একটা ইয়া লম্বা সারা ঘর পাক খেয়ে খেয়ে বানানো ল্যাজ তৈরী হ না মোটেই আমার নয় ও নির্ঘাৎ মিষ্টুর মায়ের হবে, সেই মাঝখানে থেবড়ে বসে ছিল কিনা!

তারপর কত কিছু যে বানানো চলল প্লে ডো দিয়ে! হাঁস, শজারু, ত্যারাব্যাঁকা কুমির, প্রজাপতি, হ্যান ত্যান প্যান তার কিছু কিছু মিষ্টুর মায়ের মুখে আটকে আটকে তাকে সাজগোজকরানোও হ তারপর বড়রা একটু নিজ নিজ কাজে মনোনিবেশ করেছে, ওমা হঠাৎ হুলুস্থূলু!

আমার ডাক কই গেলো!”

তিতির হলুদ প্লে ডো দিয়ে হাঁসের ছানা বানিয়েছিল সে আপন খেয়ালে কখন কোথায় ভেসে গেছে কিন্তু তা বললে কি আর সে শোনে! বালিশ সরিয়ে, খাটের নীচে উঁকি মেরে, মিষ্টুর বগলে - কোথাও খুঁজে না পেয়ে সে মিষ্টুর মা বেচারীকে খপ করে ধরল,

তুমি আমার ডাক এর ওপর বসে পড়েছো!”

বলেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার পাৎলুনের তলায় হাত দিয়ে উত্তোলন প্রচেষ্টা শুরু করে দিল তাও আবার এক হাতে!

তা, মিষ্টূর মা কিনা আড়েবহরে তিতিরের মাম্মার চেয়ে সামান্যই কম, আর তিতিরও গোবর গণেশ, ভীম ভবানী এসব কিছু তো নয় তাই হাজার টানাটানি করেও পাৎলুনের একটা অংশ ছাড়া কিছুই তোলা গেলো না বিরসবদনে তিতির তখন আন্টির ওড়নাটা খুলে নিয়ে মন দিয়ে একটা পাগগিবানাতে বসে গেলো

তারপর আরো কত কিছু যে হল সে আমরা বড়োরা ভুলে মেরে দিয়েছি মানে ঘরের মধ্যে অত তাঝঝিম মাঝঝিম চললে কি আর মনে রাখা যায়! খালি মনে পড়ছে মিষ্টু একবার তিতিরকে পিঠে ঘোড়া হয়ে বসতে বলেছিল বলামাত্র তিতির যে হালুম করে লাফিয়ে বসে পড়বে সেটা বোধহয় সে ভাবেনি খানিক পরে খুব মিহি গলায় দেখি বলছে, “যা ভেবেছিলুম, এ যে তার চেয়ে বেশি ভারি!”

তারপর আরো আরো আরো খেলা হ আলুচ্চপ খাওয়া হ, যদিও কলকাতার আলুচ্চপ নাকি বোম্বের চেয়ে বাজে (হে ঈশ্বর, কোনদিন বলবে বড়াপ্পাও পৃথিবীর  সেরা খাবার!) আরো কী কী সব গোপন গল্প হল দুজনের সেসব আবার আমাদের মানে বড়োদের শুনতে মানা না শুনে কী করে গল্প লিখব জিগ্যেস করব ভেবেছিলুম, কিন্তু কেউই কিনা আমাদের পাত্তা দিচ্ছিল না তাই আমরাও ওদের পাত্তা দিইনি

যাবার সময়ে বেশ একটু মন খারাপ হচ্ছিল দু পক্ষেরই বেশ কান্নাকাটি করার মত মন খারাপ

কিন্তু সবচেয়ে বিপত্তি হয়েছিল মিষ্টুর মায়ের দুই কন্যার আবদারে, তাকে ঐ পাগগিটা মাথায় দিয়েই সারা পাড়ার চোখের সামনে বাড়ি থেকে বেরোতে হয়েছিল কিনা!




No comments:

Post a Comment