ইস্কুল থেকে আনতে যাবার সুযোগ সবদিন পাই না। অফিস থাকে, আর পাঁচটা সংসারের কাজ থাকে। গতকাল পেয়েছিলুম।
মাকে দেখে লাইন টাইন ভেঙে তিতিরপাখি যা উসেইন বোল্ট মার্কা দৌড়টা দিল না! ভীতুর ডিম মা ভয়ে শিঁটিয়ে গেল এই বুঝি টিচার বকে দেয়। কিন্তু তিনিও আবার কী জানি কেন মাকে বড় স্নেহ করেন, একগাল হেসে হাত নাড়লেন খালি।
"ম্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ..."
ওরে ছাড় ছাড় ছাতা পড়ে গেল জামার পাশের সেলাই পড়পড় করে খুলে গেল চশমা বেঁকে গেল....বলতে না বলতে দেখি হাতে ব্যাগ বোতল সব ধরিয়ে দিয়ে তিনি রওনা দিয়েছেন।
আরে ধ্যাৎ, ব্যাগের চেন খুলে রেখেছিস কেন, এক্ষুণি বই পড়ে যেত...পরক্ষণেই মায়ের নিজের ব্যাগের খোলা চেন দিয়ে এক অসম্ভব অ্যাঙ্গলে পেনটা লাফিয়ে উঠে পড়ে যায়...সব ষড়যন্ত্র! সঅব!
সামলে সুমলে হাঁকপাঁক করে মেয়ের পশ্চাদ্ধাবন করি, ইয়ে হাই... হ্যাল্লো মিস্টার সিনহা...কেইসি হো মিসেস পাটিল...হেঁ হেঁ (নাম ভুলে গেছি)...হাই মিহিকা, মাম্মি কিধার?
ওরে ওরে থাম থাম ওদিকে যাব না, ওরে আমায় দোকান যেতে হবে রে, ওরে ডিম পাড়তে হবে....দুত্তোর! ডিম কিনতে হবে রে!
আর ওরে! তিতির অন্যদিকের ফুটপাথ ধরে এক দৌড়ে হুইইইই ওখানে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে স্বর্গীয় হাসি হাসছে।
কাছে গিয়ে পৌঁছে সবে হাহাকারটা শুরু করেছিলুম, মেয়ে ডিম নিয়ে আমার হিমসিম খাওয়াটাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, আমার চারদিকে চর্কিপাক খেতে লেগে গেল। সে এমন ঘোরান ঘুরতে লাগল যে মাথা ঘুরে আমিই উলটে পড়ি আর কি!
থাম বাপু থাম। ঘুরপাক খাবি তো কালীমন্দির চ’, বারান্দায় চমৎকার ঘুরপাক খাবার জায়গা আছে। আদ্ধেক রাস্তা যখন চলেই এসেছিস...
অমনি তিতির ছুট লাগায় তিড়িং তিড়িং...বা রে, বেশ চড়ুই পাখির মত লাফিয়ে লাফিয়ে যায় তো মেয়েটা! অবশ্য চড়ুইয়ের মত জোড়া পায়ে না, এক্কা দোক্কার মত একবার এ পা একবার ও পা...দেখি তো আমি একটু করে কেমন লাগে...
হেঁ হেঁ ... কেইসা হ্যায়... হাঁ ম্যায় ঠিক হুঁ...আরে দূর মুখপোড়া আমার পায়ে কিছু হয়নি অমন ড্যাব ড্যাব করে দেখার কিছু হয়নি!
আরে বাহ! রাস্তার ধারে এই পোস্টারটা আগে দেখিনি তো! নাদুশনুদুশ গণেশ আর জটাজূটধারী বেদব্যাস। মহাভারত রচনা চলছে। অ্যাই তিতির! এদিকে আয় দ্যাখ দ্যাখ...
শরীরটা কোমর থেকে বাঁদিকে তিয়াত্তর ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে বেঁকিয়ে কেউ কি করে ছবি দেখে কে জানে! আমি অমন কেতরে দেখতে গেলে এক্ষুণি ভারসাম্য হারিয়ে ঠক করে মাথা ঠুকে পড়ব।
কি দেখলি, এত পাঁয়তাড়া কষে? বল দেখি কে?
“সারাক্ষণ লাড্ডু খাবে নাকি? দেখছিস না লিখছে? আর সামনে এ কে বল দিকি?”
নাকের ওপর চশমা ঠেলে দিয়ে নিরীক্ষণ।
“জানিস কে?”
“হুঁউউউ! গণেশের দাদুমণি।”
“দা...ঈঁক্!!!”
“হ্যাঁ তো। গণেশকে হোমটাস্ক করাচ্ছে দেখছ না?”
লাফিয়ে চলে যেতে যেতে শেষ বোমাটা ছেড়ে গেল,
“এত বড় মেয়ে হয়েছো, অপিশে পড়ছো, কিচ্ছুই জানো না!”