Saturday, 8 December 2018

খেলাঘর


তিতিরদের এখনকার বাড়িটা ভারী সুন্দর। ভিতরের ঘরে, দেওয়াল জোড়া জানলার এ পাশের কোনায় পড়ার টেবিল, ও পাশে বইয়ের আলমারি। টেবিলে থাক দেওয়া মায়ের অধুনাপাঠ্য বইয়ের ফাঁকে ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’, আর আলমারিতে তিতিরের নাগালের তাকে ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’। হুঁ হুঁ বাবা, তিতির জানে!

এই দুইয়ের মাঝের খোলা অংশে, সাদা টালি বসানো মেঝেতে তিতিরের ‘খেলাঘর’। ধুমসো দেড়ফুটিয়া ট্রাক থেকে হাফ সেন্টিমিটার সাইজের পুঁতি – সব পাওয়া যায় সেখানে তিতির যখন খেলতে বসে। কোনোদিন বাক্সের উপর বাক্স চাপিয়ে পুলিশ ষ্টেশন হয়, কোনোদিন চিড়িয়াখানা। এই কনস্ট্রাকশন সাইটে মাটি কাটা গাড়ি আর সিমেন্ট মিক্সার ঘুরে বেড়াচ্ছে, তো এই মেলা বসে বেলুন বিক্রি হচ্ছে। যেহেতু ক্রীড়াঙ্গনে ওই হাফ কি এক সেন্টিমিটার সাইজের গড়গড়ে জিনিসের বিশেষ প্রাদুর্ভাব, তাই মা বকের মত ইয়াব্বড় পা ফেলে ডিঙ্গি মেরে হাঁটা চলা করে তিতির খেলতে বসলে।

যদিও তাতেও যে পুরো রেহাই পায় তা নয়।

নিজের কাজে মহাভারত পড়ছে মা। রাজশেখর বসুর মহাভারত রাখা আছে অন্য ঘরে, অন্য বইয়ের আলমারিতে। উঠে দাঁড়িয়ে পা ফেলতেই সড়াৎ করে বিনা আয়াসে তিন ফুট মত এগিয়ে গিয়ে, পরম সাবলীল শরীর ও ব্যালান্সিং ক্ষমতার পরিচয় দিয়ে খাটের কোনায় খটাং করে হাঁটু ঠুলে ফেলল।

“অ্যাঁ তুমি আমার রাস্তা ভেঙে দিলে!!!”

ত্রিভঙ্গমুরারি হয়ে দাঁড়িয়ে মা তখন পায়ের শুশ্রূষা করছে। সেই বা ছাড়বে কেন,

“তুই যে আমার হাঁটু খুলে দিলি তার বেলা?”

মেয়ের মনে মা-কে নিয়ে প্রবল মায়া, নিজেকে কিঞ্চিৎ পরিমাণে মহিলার গার্জেনও জ্ঞান করে সে। অতএব উদ্বেগের হদ্দমুদ্দ হয়ে হাঁটুতে ঠাণ্ডা জল থাবড়ে (কন্সট্রাকশন সাইটে মশলা-গাড়িতে সিমেন্ট মাখতে জল লাগে তা জানো না? কৌটো করে জল নিয়ে এসে বসতে হয় তার জন্য), বোরোলীন লেবড়ে, হামি ও ফুঁ দিয়ে তবে ছাড়ল। একটা পুরোনো শাড়ির ছেঁড়া পাড় (বার্বির শাড়ি) দিয়ে পট্টিও বেঁধে দিতে চেয়েছিল, সেটা আর মা নিতে রাজি হয়নি।

মা খাড়া হয়ে জানতে চায়, ঠিক পায়ের গোড়াতে অতগুলো জুড়ে জুড়ে বানানোর খেলার পাইপগুলো রেখেছিল কেন?

“ওঁগুলো তো জলের নল, রাস্তা সারাচ্ছি না? খুঁড়ে তুলেছি, রাস্তার ধারে অমন করেই তো সাজিয়ে রাখার নিয়ম!”

চোখ পাকিয়ে দেখা যায়, রাস্তাই বটে। কী করছিল কে জানে, আপাতত মায়ের চরণকমলের দৌলতে সারা রাস্তা জুড়ে পর পর পাইপেরা শুয়ে আছে পাশাপাশি।

“তুঁমি আমার রাস্তা ভেঙে দিয়েছ!”

“মোটেই ভাঙিনি, দ্যাখ কী সুন্দর সমান করে দিয়েছি।“

“মা! আইডিয়া! তুমি হচ্ছ রোড রোলার, কেমন?”

সবেগে রাজশেখরবাবুর খোঁজে অন্য ঘরে পলায়ন করা ছাড়া এরপর আর কী বা করার থাকে, বলুন!

---

মা ল্যাপটপে খুটখাট করছে। তিতির খেলাঘরে মত্ত। বিশাল ব্যস্ততা সেখানে, বার্বির জন্মদিন হচ্ছে।

“মাঁ? ও মা?”

“হুঁ?”

“তোমার কোন রংটা পছন্দ?”

“তিতিরের রঙ।“

“আরে ধ্যাৎ! রেড, না ইয়েলো, না পিংক...এইরকম!”

“উঁ? দে পার্পল দে।“

খচর মচর হল কিছুক্ষণ। তারপর কাঁধের পাশে খুদে মুণ্ডূ।

“আমার পাপ্পল নেই ওইগুলো। অন্য রঙ বলো।“

চোখ ফিরিয়ে দেখি বাচ্চাদের জুয়েল বানানো কিটগুলোর সমস্ত পুঁতি ঢিবি করে জড়ো করা। সেফ অপশন বলে দিই, “পিংক”।

খানিক পর খুদে খুদে প্লেটে পিংক ডোনাট, পিংক পাস্তা, পিংক কাস্টার্ড, পিংক কেক আর পিংক কাপে করে পিংক স্ট্রবেরি শেক দেওয়া হয় আমায়।

“ইকি, জলটা এমন গোলাপি করলি কি করে?”

“সিক্রেট!!!” বলে মেয়ে জলরঙের বাক্সটা ইশারায় দেখায়।

চাকুম চুকুম করে সব খেয়ে ফেলি। আহা, মিছিমিছি। কীইইইইইইই ভালো হয়েছে রে!

গর্বিতা কন্যা দুহাত ভর্তি রবারের পুতুল নিয়ে স্নানার্থে যাত্রা করেন এরপর।

মা আরো কাজ করে। হিসেব মিলছে না দেখে আবার নতুন করে শুরু থেকে শুরু করে। আরো অনেকক্ষণ খুটখাট করার পর খেয়াল হয় আন্টির দিয়ে যাওয়া চা জুড়িয়ে জল হয়ে যাচ্ছে। মা তখন পিঠ টান করে আড়মোড়া ভাঙে, চোখ বন্ধ করে একটু ব্রিদিং এক্সারসাইজ করে, তারপর আলতো করে কাপে একটা লম্বা চুমুক দেয়।

তারপর হাঁকপাক করে বাথরুমে দৌড়য়।

ইয়ে, কাপ গুলিয়ে ফেলে জলরং গোলা জল এক চুমুক খেয়ে ফেললে খুব একটা ক্ষতি হয় না, বলুন?



  

Friday, 23 November 2018

শার্ক

হাতে দুধের গ্লাস, গোঁফে সূক্ষ্ম সরের প্রলেপ। বিনুনি বাঁধা ডুগডুগ করে নড়া মুণ্ডুটাকে দেখে ভারি মজা লাগছিল। পঞ্চম চুমুকটা দিয়ে গ্লাস রেখেই সুর খেলিয়ে বায়না ভেসে এল, “মা, মঈশাসুর বলো।“
অগত্যা, তাই বলি।
---
মঈশাসুরের খুব ইচ্ছে হয়েছিল একটা “শাক্‌” পুষবে। লালশাক কি নটেশাক নয় গো, ওই যে জলে থাকে, পিঠে তিনকোনা পাখনা, সেইটে! শাআআআআররররররর্ক্কক্কক্কক্‌!
এদিকে দুগগা মা তো বলে দিয়েছে ‘কভ্‌ভি নেহি!” মঈশাসুরটা তো দুষ্টু, করেছে কী, নিজে নিজে লুকিয়ে লুকিয়ে একটা বেবি শার্ক নিয়ে এসেছে...
[পাঁচ মিনিটের বিরতি। ‘বেবি শার্ক টুট্‌ টু টুট্‌ টু টু’ গেয়ে ট্যুইস্ট নাচার জন্য। যারা ছানা নিয়ে এ গান একবারও শুনেছেন তারা বুঝবেন এর মাহাত্ম্য!]
তো, মঈশাসুর তো সেই শার্ক এনে চানের বালতিতে লুকিয়ে রেখেছে। খুব মজা, ‘শাক্‌’ পুষেছে। কিন্তু হল কী...
[এইখানে আবার দুধ ফিনিশ করার বিরতি। মানে বিরতি না দিলে দুধ যেমন কে তেমন পড়ে থাকছিল কিনা।]
শার্কটা ছিল মহাশার্ক প্রজাতির। পরদিন ঘুম থেকে উঠে মঈশাসুর দেখে সে এইটুকু এক বিঘৎ থেকে এক রাত্তিরেই বেড়ে বালতি ভরে ফেলেছে। তারপর দাঁত টাত মেজে দুধ খেয়ে এসে ঘরে ঢুকেই তো ‘আঁই আঁই আঁই’ চীৎকার করে উঠেছে।
শার্ক লম্ফ মেরে বালতি থেকে বেরিয়ে সারা ঘরে কিলবিল করে বেড়াচ্ছে। মঈশাসুরকে দেখেই সে লক্ষ কোটি ধারালো দাঁত বাগিয়ে তেড়ে এসেছে।
আর যায় কই! মঈশাসুর তো ‘বাঁচাও বাঁচাও’ করে সারা বাড়ি দৌড়চ্ছে! তার পিছু পিছু ল্যাজে নেচে নেচে চলেছে সেই বেবি শার্ক! ‘টুট্‌ টু টুট্‌ টু টু’ গান গাইছিল কিনা জানি না, কিন্তু সে সরস্বতী আর গণেশের পড়ার টেবিলে ল্যাজ বুলিয়ে সব বইখাতা ফেলে দিয়েছে, কার্তিকের ফুটবল নাকে করে নাচাতে গিয়ে জানলার বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে, লক্ষ্মীর নতুন জুতোর ওপর দিয়ে ঘষে গিয়ে সেটা থ্যাবড়া করে দিয়েছে, আর রান্নাঘরে মুখ বাড়িয়ে দুগগামাকে অ্যায়সা মেছো ভেংচি কেটেছে যে আঁতকে উঠে দুগগামার হাত থেকে ফোড়নডালা পড়ে গিয়ে সারা ঘরে সরষে কালোজিরে গড়াগড়ি যাচ্ছে।
দুগগা মা তো খেপে আগুন! কে এসব বাড়িতে ঢুকিয়েছে অ্যাঁ?
দুগগা মার ওই রেগে কাঁই রূপে হাতা খুন্তি নিয়ে তেড়ে আসা দেখেই তো শার্কের হয়ে গেছে! সে এদিক দেখে ওদিকে দেখে, দেখে কি জানলার বাইরেই একটা বড় ঝিল। অমনি শার্ক জানলা পেরিয়ে সোজা সেই ঝিলের নিচে। আর মঈশাসুর দশ হাতের কানমলা আর পিঠে গুমগাম কিল খেয়ে চোখ মুছতে মুছতে নিজের ঘরে।
---
ওহে, পড়াশুনোটা করো এবার? গালে হাত দিয়ে বসে বসে কী ভাবছ?
এঁ, মা, আট্টু বলবে? ওই শার্কটার তাপ্পর কী হল?
আচ্ছা আগে অঙ্কগুলো হয়ে যাক, এক পাতা হাতের লেখা হোক, একটু বাংলা পড়া হোক।
তারপরে মাতাকন্যার ‘ঘন্টাখানেক সঙ্গে হোমটাস্ক’জনিত প্রবল পরিশ্রমের কথা উহ্য থাকুক। ততক্ষণ শার্কটা খেয়ে দেয়ে আরো মোটা হোক, আরো বড় হোক, আরো পাজি হোক।
আবার তার সঙ্গে দেখা হয় স্নান খাওয়া সেরে দুপুরে শুতে এসে। মায়ের কোলের কাছে ভিজে চুল এলানো কচি মুণ্ডু ঢুকে পড়ে, মিহি মিহি গলায় আবার বায়না ওঠে, “মা? গপ্পো? শার্ক?”
---
একদিন না, দেখা গেল, দুজন লোক সেই ঝিলের ধারে পা টিপে টিপে যাচ্ছে। একটা ছোট সাইজের, বিনুনি বাঁধা, অন্যজন বড়, সালোয়ার কামিজ পরা। বড়জনের হাতে একটা ছিপ।
[একজনের উত্তেজিত হয়ে উঠে বসা ও অন্যজনের তাকে আবার ভুলিয়ে ভালিয়ে শোওয়ানোর বিরতি।]
তারপর তো তারা গুছিয়ে বসেছে ঝিলের ধারে। বগা পুলিশ টুলিশ কেউ নেই দেখে নিয়েছে। ছিপ ফেলেছে।
আর ফেলতে না ফেলতে ছিপে টান!
তুলে দেখে কী...
‘মাছ? মাছ? মা, মাছ?”
একটা ছেঁড়া জুতো। গার্ড আঙ্কলদের কারো। বিচ্ছিরি দেখতে, মুখ হাঁ।
[হাসির বিরতি।]
তারপর আবার ছিপ ফেলেছে। খানিক পরে আবার ঠুকরেছে। অমনি তো মা এক টান। আর দেখে কী...
“এবার মাছ? মা চিংড়ি মাছ?”
দেখে কী একগাদা শ্যাওলা আর ঝাঁঝি। সে কী বদ গন্ধ সেগুলোয় তোকে কী বলব!
[‘ইশ্‌ ইশ্‌’ করে প্রবল হাসির বিরতি।]
যা থাকে কপালে, বার বার তিনবার এসব বলে টলে তো আবার ছিপ ফেলেছে। তা এবারও খানিক পরে ফাতনা নড়ছে।
‘কী গো? মাছ, না এবার?”
হেঁইও হেঁইও করে টেনে তুলে দেখে একটা ফুটিফাটা ছেঁড়া তেরপল। কে কবে ফেলে গেছিল কে জানে।
[এখনো মাছ না পাওয়ায় গোঁসা ও গোঁসাভঙ্গের বিরতি।]
তারপর হল কী , সেই শার্কটা জল থেকে মুখ বাড়িয়ে বলল, রাগ কোরো না তিতিরপাখি। আমি আসলে আজ আমার ঘরে সাফ করছিলুম তো, তাই যা যা জঞ্জাল ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছি সব তোমার ছিপে আটকে গেছে।
কেন তুমি অমন করেছ? আমি কী করে মাছ ধরব তাহলে?
তাই তো! কিন্তু সাফ না করেই বা উপায় কী, লোকে এত এসব ফেলে দেয় জলের মধ্যে আমরা তো থাকতেই পারি না।
তারপর? তারপর তিতির শার্ককে ‘হেল্প’ করল এসব জিনিস ছিপ দিয়ে জল থেকে তুলে দিয়ে – জল একদম ‘পোষ্কার’ হয়ে গেল, আর শার্ক তিতিরকে ‘হেল্প’ করল রাশি রাশি মাছ ওর ছিপে গেঁথে দিয়ে।
---
রাশি রাশি মাছের মধ্যে কটা তেলাপিয়া আর কটা চিংড়ি সে হিসেব দিতে গিয়ে দেখি আরেকজন ঘুমের দেশে। ভারি মিষ্টি একগাল ‘বেবি শার্ক’ মার্ক হাসি মুখে নিয়েই।
‘টুট্‌ টু টুট্‌ টু টু’!


Sunday, 21 October 2018

টুম্পা'স ওয়ান্ডার কোম্পানি


ফ্লাফি, কুকি, ট্রিকি, ঋদ্ধি আর সিদ্ধি। পাঁচ বন্ধু। খুব ভাব ওদের, সদা সর্বদা একসঙ্গে থাকে। সেদিন ওরা মাঠে গেছিল খেলতে। দুম দাড়াক্কা করে খুব খেলেছে।  তারপর না সারা গায়ে 'ধুলমিট্টি' মেখেজুখে একশা। সে কি রাম নোংরা, বললে পেত্যয় যাবেন না। কিছুতেই উঠছে না গা থেকে। 



কী করা যায়! অগতির তো একটাই গতি। মা----!



মাকে, সুতরাং, 'টুম্পা' ওয়ান্ডার কার ওয়াশিং কোম্পানি' খুলতে হল। সেকি, বোঝেননি এখনো? এরা পুতুল তো নয়ই, এমনকি সফট টয়ও নয়। এরা আমাদের বাড়ির অগুনতি চারচাকা আর দুচাকার বাছাই পাঁচ। একটা ট্রেন ইঞ্জিন, একটা মাটি-খাওয়া গাড়ি, একটা মশলা-গাড়ি, মানে সিমেন্ট  মিক্সার আর কী, একটা ক্রেনগাড়ি আর একটা ঘোড়ার গাড়ি। কোনটা কে জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না। খালি কুকি হল ঘোড়ার গাড়ি এটা মনে আছে, কারণ তার আফটার ওয়াশ সার্ভিস অন্যরকম।



নতুন কোম্পানি সেট আপ করা কি মুখের কথা! ওঠো রে, পাশে চায়ের কাপটি নিয়ে থেবড়ে বোসো রে, প্ল্যান করো রে, যন্তরপাতি সাজাও রে, তাপ্পর খদ্দেরদের লাইন করে দাঁড় করাও রে, লাইনের অর্ডার নিয়ে বিনুনি বাঁধা ক্লায়েন্টের সঙ্গে ঝগড়া করো রে, তাপ্পর ঝগড়ায় হেরে গিয়ে গোঁজ হও রে, তাপ্পর গালে মধুর মত মিষ্টি হামি খেয়ে এথিক্স টেথিক্স ভুলে ক্লায়েন্টকে চটকু করো রে, তাপ্পর সেই চটকুর ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া ফ্লাফি, কুকি, ট্রিকি, ঋদ্ধি আর সিদ্ধিকে কুড়িয়ে আনো রে।



এইরকম মহাসমারোহে শুরু হয়ে গেল আমাদের কোম্পানির যাত্রা। খুব সিস্টেমেটিক পদ্ধতি। প্রথমে একটা রুমাল, না সরি, প্ল্যাটফর্মের উপর গাড়ি দাঁড়াচ্ছে, জেট দিয়ে, যেটা কিনা আমার একটা বাতিল কলমের মত দেখতে, স্পীডে তার গা ধুইয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারপর আরেকটা প্ল্যাটফর্মে, সেটা একটা পাজলের পিস কাঠের চৌকো, নিয়ে গিয়ে গায়ে ভালোওওওও করে ইরেজার ঘষা, আরে দ্যুৎ, সাবান মাখানো হচ্ছে। আবার আগের প্ল্যাটফর্মে এনে ধুইয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ধৌত গাড়ি যাচ্ছে হলুদ নরম ঝাড়নে গা মুছে নিতে, ব্যাপারটা হচ্ছে মায়ের কোলে শুয়ে। তারপর হাতে করে তুলে (ওটা রোবোটিক লিফটার মেশিন ধরে নিতে হবে) ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা হাতে ধরা পাখা দিয়ে শুকনো করা হচ্ছে একদম। তারও পর মোম পালিশ হচ্ছে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা ফেল্টের টুকরো দিয়ে। তারপর? গাড়িরা একটা গোলাপী কাপে স্ট্র থেকে পেট্রোল খাচ্ছে। 



শুনতে সোজা মনে হলেও মোটেই সোজা নয়। আর ক্লায়েন্টটিও মহা বায়নাকুটে। জেট চালানোর সময় মুখ দিয়ে ঠিক একরকম 'ঝোপ্ ঝোপ্ ঝপ্পাসসসস্' আওয়াজ না করলে কাঁই কাঁই করছে, পাখা সমান স্পীডে না চালালে গোঁসা হচ্ছে, গাড়ির নাকে এক্সট্রা মোমপালিশ না ঘষলে হাত পা ছুঁড়ছে। পেট্রোল  খাওয়ানো নিয়ে তো হাতাহাতিই হয়ে গেল, আমি গাড়ির পেছনবাগে স্ট্র গুঁজেছিলুম, তিতির মুখ দিয়ে খাওয়াবেই খাওয়াবে। শেষমেশ একটা রফা করে পেটে ইনপুট চ্যানেল করা হল, সেই 'কাস্তে দিয়া পেট চিরিয়া ঘাস ভরিয়া দেয়' স্টাইলে। 



কুকি অবশ্য পেট্রোল খায় না, তাকে পিঙ্ক প্লাস্টিকের ফুলকাটা প্লেটে 'দানাপানি' দিতে হল। সেই সঙ্গে আবার মোম পালিশের সাথে ফ্রী 'দলাইমলাই' যদিও সেটা ঘোড়ার প্রাপ্য কিন্তু বিচ্ছু ক্লায়েন্ট নিজেই কোলে এসে বসে নিয়ে নিল। 



এর মধ্যে 'রবাহূত', মানে দাদুমণি, এসে হাজির। তাকে গাড়িদের পরিচয় দেওয়া হল। তার পর পড়া ধরা হল, 'বলো কোনটা কে' কিন্তু রহস্যের বিষয় হল, যদিও তিতির কিচ্ছুউউউউউ জানে না, দাদুমণির হাতে পড়া বলার জন্য দেওয়া গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে একটা প্যালেস সেট এর অন্য কী যেন খালি চলে যাচ্ছিল। ফলে পড়া বলা হচ্ছিল এইরকম -



"ফ্লাফি"

"এটা তো কমোড!"

"--- ট্রিকি"

"কমোড"

"কুকি!"

"কমোড"

"ভুলে গেছি...(মায়ের ঠোঁট নাড়া) ... ঋদ্ধি"

"কমোড

"সিদ্ধি ( বাই প্রোসেস অফ এলিমিনেশন)"

"আবার কমোড!"

এইখানে আর হাসি সামলাতে না পেরে পুরো হিজিবিজবিজের মত মাটিতে হাত পা ছুঁড়ে ক্লায়েন্টের গড়াগড়ি। হাসি চাপতে চাপতে দাদুমণির প্রস্থান।



তারপর ঝকঝকে সাজা পাঁচ গাড়ি দল বেঁধে চলল পিকনিক করতে। এত খাটনির দাম পাওয়া গেছে মোটে পাঁচখানা লুডোর ঘুঁটি, তাও আবার তার একটাও লাল নয়৷ কোম্পানি তুলে দেব ভাবছিলুম বসে বসে, জনান্তিকে খবর পাওয়া গেল পিকনিকের মাঠে নাকি বেজায় কাদা হয়েছে। রিপিট অর্ডার এল বলে



তাই এখনো দোকান খুলে বসে আছি। চাই নাকি কারো? ফাস্-কেলাস সার্ভিস করে দেওয়া হবে, চাই কি বাম্পার লাকি ড্রয়ের মাধ্যমে বেছে নেওয়া কোনো ক্রেতাকে প্রাইজ হিসেবে ওই প্লাস্টিকের কমোডটাও গিফট করা যেতে পারে।