Sunday, 21 October 2018

টুম্পা'স ওয়ান্ডার কোম্পানি


ফ্লাফি, কুকি, ট্রিকি, ঋদ্ধি আর সিদ্ধি। পাঁচ বন্ধু। খুব ভাব ওদের, সদা সর্বদা একসঙ্গে থাকে। সেদিন ওরা মাঠে গেছিল খেলতে। দুম দাড়াক্কা করে খুব খেলেছে।  তারপর না সারা গায়ে 'ধুলমিট্টি' মেখেজুখে একশা। সে কি রাম নোংরা, বললে পেত্যয় যাবেন না। কিছুতেই উঠছে না গা থেকে। 



কী করা যায়! অগতির তো একটাই গতি। মা----!



মাকে, সুতরাং, 'টুম্পা' ওয়ান্ডার কার ওয়াশিং কোম্পানি' খুলতে হল। সেকি, বোঝেননি এখনো? এরা পুতুল তো নয়ই, এমনকি সফট টয়ও নয়। এরা আমাদের বাড়ির অগুনতি চারচাকা আর দুচাকার বাছাই পাঁচ। একটা ট্রেন ইঞ্জিন, একটা মাটি-খাওয়া গাড়ি, একটা মশলা-গাড়ি, মানে সিমেন্ট  মিক্সার আর কী, একটা ক্রেনগাড়ি আর একটা ঘোড়ার গাড়ি। কোনটা কে জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না। খালি কুকি হল ঘোড়ার গাড়ি এটা মনে আছে, কারণ তার আফটার ওয়াশ সার্ভিস অন্যরকম।



নতুন কোম্পানি সেট আপ করা কি মুখের কথা! ওঠো রে, পাশে চায়ের কাপটি নিয়ে থেবড়ে বোসো রে, প্ল্যান করো রে, যন্তরপাতি সাজাও রে, তাপ্পর খদ্দেরদের লাইন করে দাঁড় করাও রে, লাইনের অর্ডার নিয়ে বিনুনি বাঁধা ক্লায়েন্টের সঙ্গে ঝগড়া করো রে, তাপ্পর ঝগড়ায় হেরে গিয়ে গোঁজ হও রে, তাপ্পর গালে মধুর মত মিষ্টি হামি খেয়ে এথিক্স টেথিক্স ভুলে ক্লায়েন্টকে চটকু করো রে, তাপ্পর সেই চটকুর ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া ফ্লাফি, কুকি, ট্রিকি, ঋদ্ধি আর সিদ্ধিকে কুড়িয়ে আনো রে।



এইরকম মহাসমারোহে শুরু হয়ে গেল আমাদের কোম্পানির যাত্রা। খুব সিস্টেমেটিক পদ্ধতি। প্রথমে একটা রুমাল, না সরি, প্ল্যাটফর্মের উপর গাড়ি দাঁড়াচ্ছে, জেট দিয়ে, যেটা কিনা আমার একটা বাতিল কলমের মত দেখতে, স্পীডে তার গা ধুইয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারপর আরেকটা প্ল্যাটফর্মে, সেটা একটা পাজলের পিস কাঠের চৌকো, নিয়ে গিয়ে গায়ে ভালোওওওও করে ইরেজার ঘষা, আরে দ্যুৎ, সাবান মাখানো হচ্ছে। আবার আগের প্ল্যাটফর্মে এনে ধুইয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ধৌত গাড়ি যাচ্ছে হলুদ নরম ঝাড়নে গা মুছে নিতে, ব্যাপারটা হচ্ছে মায়ের কোলে শুয়ে। তারপর হাতে করে তুলে (ওটা রোবোটিক লিফটার মেশিন ধরে নিতে হবে) ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা হাতে ধরা পাখা দিয়ে শুকনো করা হচ্ছে একদম। তারও পর মোম পালিশ হচ্ছে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা ফেল্টের টুকরো দিয়ে। তারপর? গাড়িরা একটা গোলাপী কাপে স্ট্র থেকে পেট্রোল খাচ্ছে। 



শুনতে সোজা মনে হলেও মোটেই সোজা নয়। আর ক্লায়েন্টটিও মহা বায়নাকুটে। জেট চালানোর সময় মুখ দিয়ে ঠিক একরকম 'ঝোপ্ ঝোপ্ ঝপ্পাসসসস্' আওয়াজ না করলে কাঁই কাঁই করছে, পাখা সমান স্পীডে না চালালে গোঁসা হচ্ছে, গাড়ির নাকে এক্সট্রা মোমপালিশ না ঘষলে হাত পা ছুঁড়ছে। পেট্রোল  খাওয়ানো নিয়ে তো হাতাহাতিই হয়ে গেল, আমি গাড়ির পেছনবাগে স্ট্র গুঁজেছিলুম, তিতির মুখ দিয়ে খাওয়াবেই খাওয়াবে। শেষমেশ একটা রফা করে পেটে ইনপুট চ্যানেল করা হল, সেই 'কাস্তে দিয়া পেট চিরিয়া ঘাস ভরিয়া দেয়' স্টাইলে। 



কুকি অবশ্য পেট্রোল খায় না, তাকে পিঙ্ক প্লাস্টিকের ফুলকাটা প্লেটে 'দানাপানি' দিতে হল। সেই সঙ্গে আবার মোম পালিশের সাথে ফ্রী 'দলাইমলাই' যদিও সেটা ঘোড়ার প্রাপ্য কিন্তু বিচ্ছু ক্লায়েন্ট নিজেই কোলে এসে বসে নিয়ে নিল। 



এর মধ্যে 'রবাহূত', মানে দাদুমণি, এসে হাজির। তাকে গাড়িদের পরিচয় দেওয়া হল। তার পর পড়া ধরা হল, 'বলো কোনটা কে' কিন্তু রহস্যের বিষয় হল, যদিও তিতির কিচ্ছুউউউউউ জানে না, দাদুমণির হাতে পড়া বলার জন্য দেওয়া গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে একটা প্যালেস সেট এর অন্য কী যেন খালি চলে যাচ্ছিল। ফলে পড়া বলা হচ্ছিল এইরকম -



"ফ্লাফি"

"এটা তো কমোড!"

"--- ট্রিকি"

"কমোড"

"কুকি!"

"কমোড"

"ভুলে গেছি...(মায়ের ঠোঁট নাড়া) ... ঋদ্ধি"

"কমোড

"সিদ্ধি ( বাই প্রোসেস অফ এলিমিনেশন)"

"আবার কমোড!"

এইখানে আর হাসি সামলাতে না পেরে পুরো হিজিবিজবিজের মত মাটিতে হাত পা ছুঁড়ে ক্লায়েন্টের গড়াগড়ি। হাসি চাপতে চাপতে দাদুমণির প্রস্থান।



তারপর ঝকঝকে সাজা পাঁচ গাড়ি দল বেঁধে চলল পিকনিক করতে। এত খাটনির দাম পাওয়া গেছে মোটে পাঁচখানা লুডোর ঘুঁটি, তাও আবার তার একটাও লাল নয়৷ কোম্পানি তুলে দেব ভাবছিলুম বসে বসে, জনান্তিকে খবর পাওয়া গেল পিকনিকের মাঠে নাকি বেজায় কাদা হয়েছে। রিপিট অর্ডার এল বলে



তাই এখনো দোকান খুলে বসে আছি। চাই নাকি কারো? ফাস্-কেলাস সার্ভিস করে দেওয়া হবে, চাই কি বাম্পার লাকি ড্রয়ের মাধ্যমে বেছে নেওয়া কোনো ক্রেতাকে প্রাইজ হিসেবে ওই প্লাস্টিকের কমোডটাও গিফট করা যেতে পারে।








No comments:

Post a Comment