ব্যাপার হ’ল তিতির তো
বড় হচ্ছে, হোমটাস্ক, গান প্র্যাকটিস, আরো নানাবিধ অ্যাকটিভিটি, জন্মদিনের নেমন্তন্ন স্কুলের পিকনিক
ইত্যাদি সামাজিকতা এরকম কত কিছু ঢুকে যাচ্ছে রোজের রুটিনে আগের চেয়ে আরো বেশি বেশি
সময় নিয়ে। মা-মেয়ের হাপুটি-জুপুটি খেলার সময় যাচ্ছে কমে, ফলে এখন আর সব সময় তেমন গল্প গজায় না।
তবু, ফাঁকফোকরে
সেই যেটুকু সময় বেরোয়, তাতে যেমন
মঈশাসুরের গপ্পো গজায়, তেমনি এগুলোও
গজায় টুক টুক করে। তাই ভাবলুম এগুলোর কথাও লিখেই রাখি, পড়ে হয়তো আর কোনো পুঁচকেপানা আর তার
কোনো ‘গাজ্জেন’ এসব ‘খেলা’র মজাটা পাবে।
ইকড়িমিকড়ি – ১
===========
মাম্মার সঙ্গে লাফাতে লাফাতে বাড়ি ঢুকল কন্যা, জামা ছাড়াতে গিয়ে দেখা গেল তার হাতের
মুঠোয় একমুঠো গম। মাম্মা যখন মুদির দোকানে হিসেব করে
দাম দিচ্ছে, সামনের ড্রাম
থেকে তুলে এনেছে।
কী করবি রে?
খাব।
কাঁচা গম খাবি! তুই কি পায়রা?
এঁ, না, পায়রা নোন্না করে।
তবে কী করবি?
আচ্ছা, এইখানে পুঁতে
দিলে হয় না? গম গাছ গজাবে
বেশ, তারপর আমরা সেটা পিষে আট্টা বানাবো।
আন্টি হাউমাউ করে ছুটে না এলে দিম্মার সদ্য লাগানো ‘সং অফ ইন্ডিয়া’র দফা রফা হয়ে যাচ্ছিল আরেকটু হলে।
তিতিরের দেখি মুখে মেঘ। অগত্যা দিম্মা
ভোলাতে বসল, ঐ দশদানা গমের
গাছ দিয়ে আট্টা বানালে তো আমরা কেউই কিছু খেতে পারব না, তাঁর চেয়ে অন্য একটা জিনিস শেখাই তোকে
চল। একটা পিজবোর্ড জোগাড় করে কিছু একটা
আঁক দিকি!
আঁকার নামে তো তিতির এক পায়ে খাড়া। পিজবোর্ড খোঁজা নিয়ে খানিক এটা ওটা
টানাটানির পর দাদুমণি একটা টুকরো জোগাড় করে দেন। মাম্মা ততক্ষণে বুঝে নিয়েছে কী শেখাতে
চলেছেন দিম্মা, আহা, দিম্মারই তো মেয়ে তিনি, যতই না কেন ‘ঢ্যাঁড়শ’ প্রকৃতির হোন! মহা উৎসাহে রান্নাঘর তল্লাশি করে মুসুর
ডাল, চিঁড়ে আর পেঁয়াজের খোসা সংগ্রহ করা হয়ে গেছে তার।
আর কী? একটা ফেভিকলের
শিশি, পেন্সিল দিয়ে
একখানা আউটলাইন ড্র করা, কাঁচি দিয়ে পেঁয়াজের খোসা তিনকোনা করে কাটা আর মা-মেয়ে মিলে দিম্মার তদারকিতে পটাপট লাগিয়ে
ফেলা। অমনি কাগজের উপর ঝলমল করে পাখনা নাড়তে
লাগল ‘নিমো’র কোনো এক ভাই-বেরাদর।
ইকড়িমিকড়ি – ২
============
তিতির সেদিন সবেতেই “বোর” হয়ে যাচ্ছে। বই পড়বে না, গান শুনবে না, ছবি আঁকবে না, বিল্ডিং ব্লক নিয়ে খেলবে না, ক্রাফট বানাবে না, মেকানো দিয়ে ব্রীজ বা সাইকেল করবে না। “নোঁতুন কিঁচু” চাই তার, মানে সেই চ্চাঁই চ্চাঁই চ্চাঁই!
তখন মায়ের মাথায় ঝিং ঝিং করে আইডিয়া এল, কবে কোনো এক সিপিয়া রঙের ছোটবেলায় এটা
খেলত সে তার দিদার সঙ্গে, প্রতি পনেরো দিনে গোগ্রাসে গেলা আনন্দমেলা পত্রিকা থেকে শেখা
সম্ভবত।
দে তো রে তোর ছবি আঁকার খাতাটা।
ন্নাঁ!!! ছবি আঁকতে ‘বোর’ হচ্ছে!
আরে এটা নতুন খেলা। দে না ‘ময়ূরিকা’কে।
হাসবেন না বাপু। আমাদের বাড়িতে একটু মজার নাম দেওয়া
হয় বরাবর। তিতিরের পুতুল ‘ভ্যাবাচ্যাকা খাসনবিশ’ এর কথা তো আপনারা জানেনই, তারপর ধরুন আমাদের কলকাতার বাড়ির পাম্পের
নাম ‘পাম্পুমোহন পুরকায়স্থ’, বাজারের থলিদের নাম “ভাণ্ডারী” আর “মৎস্যগন্ধা”। তেমনি তিতিরের লেটেস্ট খাতাটার ওপর
একটা ল্যাজঝোলা ময়ূরের ছবি আছে, তাই তার নাম “ময়ূরিকা”। বলা বাহুল্য এসব দাদুমণির অবদান।
খাতা এনে দিতে কয়েকটা আয়তাকার কাগজ কেটে বার করি। একেকটার সাইজ ঐ এ-ফোর পাতার আদ্ধেক ধরুন। তার একটা নিয়ে তিন ভাঁজে ভাঁজ করি। তারপর খেলাটা বুঝিয়ে দিই।
প্রথম ভাঁজে তিতির একটা মুন্ডু আঁকবে। যে কোনো জীবের। পশু, পাখি, মানুষ, বয় গার্ল যা প্রাণ চায়।
শুধু আমাদের দেখতে দেবে না কী আঁকল। মুণ্ডুর নিচ থেকে গলার দাগটা লম্বা করে পৌঁছে দেবে পরের সাদা অংশে, দিয়ে আবার এমন ভাঁজ করবে যাতে মুণ্ডু
দেখা না যায়, খালি গলার
দাগটুকু দেখা যায়।
পরের জন, ধরুন আমি, দ্বিতীয় অংশে সেই গলার দাগ থেকে একটা
শরীর আঁকব। আবার সেই পশু, পাখি, মানুষ, বয় গার্ল যা প্রাণ চায়। আবারও, আর কাউকে দেখতে দেব না কী আঁকলাম।
কী বললেন, মুণ্ডু কার
না জেনেই আঁকতে হবে? হ্যাঁ তো! সেটাই তো মজা।
তারপর আমি শরীরের নিচ থেকে পায়ের দাগ শুরু করে আবার পরের, মানে শেষ সাদা জায়গাটায় বাড়িয়ে দেব। দিয়ে আমার পার্টটাও ভাঁজ করে পরের জনকে
দেব। ধরুন এই যেমন দিম্মাকে দিলুম।
সে মাথা গা কিচ্ছু না জেনে, আবার তার ইচ্ছে মত পা আঁকবে ঐ দাগ ধরে। যা প্রাণ চায়।
তারপর ভাঁজ খুলে পুরোটা দেখুন - হাসিমুখ মেয়ের ঝুঁটি বাঁধা মুখ, তার নিচে হয়তো চিতাবাঘের চাকা চাকা
গা থাবা ল্যাজ, আর গরু বা
হরিণ বা ছাগলের ঠ্যাঙ - আর হেসে লুটিয়ে পড়ুন সবাই মিলে।
হেব্বি না? এইটে এখন তিতিরের হট ফেভারিট, চলছে মাঝে মধ্যেই। কয়েকটা নমুনা নিচে দেওয়া গেল।